চীনে নতুন গাড়ি বিক্রি হচ্ছে পুরনো হিসেবে

চীনে এখন এত বেশি দেশীয় ব্র্যান্ড ও গাড়ি উৎপাদন হচ্ছে যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজারও শোষণ করতে পারছে না। কারণ উৎপাদন হচ্ছে ভোক্তার চাহিদার ওপর নয়, বরং সরকারের নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য। ফলে অধিকাংশ গাড়ি নির্মাতা লাভ করতে পারছে না, শিল্প বিশেষজ্ঞদের ভাষায়। চীনা ইলেকট্রিক গাড়ির দাম শুরু হচ্ছে ১০,০০০ ডলারেরও নিচে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫,০০০ ডলারের নিচে খুব কম মডেলই পাওয়া যায়।

PostImage

চীনে নতুন গাড়ি বিক্রি হচ্ছে পুরনো হিসেবে


চেংদু, চীন – ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের এই শহরের প্রান্তে, এক শপিং মলের শোরুমে নতুন গাড়ির অবিশ্বাস্য সব অফার দেওয়া হচ্ছে।
ক্রেতারা এখানে প্রায় ৫,০০০ গাড়ির মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারেন। স্থানীয়ভাবে তৈরি অডি গাড়ি ৫০% ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। চীনের এফএডব্লিউ (FAW)-এর সাত আসনের একটি এসইউভি মাত্র ২২,৩০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে, যা এর মূল দামের তুলনায় ৬০% এর বেশি কম।

এমন অফার দিচ্ছে ‘জেডকার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যারা বলে তারা গাড়ি নির্মাতা ও ডিলারদের কাছ থেকে বিশাল পরিমাণে গাড়ি কিনে থাকে। আর এই অফারগুলো সম্ভব হচ্ছে একটাই কারণে – চীনে এখন গাড়ি বেশি হয়ে গেছে।

বছরের পর বছর ধরে সরকার ভর্তুকি ও নানান নীতি গ্রহণ করেছে চীনকে বিশ্বব্যাপী একটি অটোমোটিভ শক্তিতে পরিণত করতে এবং বিশ্বের শীর্ষ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা করতে। দেশীয় গাড়ি নির্মাতারা সে লক্ষ্য পূরণ করেছে – বরং তার চেয়েও বেশি – আর এটাই এখন সমস্যার কারণ।

চীনে এখন এত বেশি দেশীয় ব্র্যান্ড ও গাড়ি উৎপাদন হচ্ছে যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গাড়ির বাজারও শোষণ করতে পারছে না। কারণ উৎপাদন হচ্ছে ভোক্তার চাহিদার ওপর নয়, বরং সরকারের নির্ধারিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য। ফলে অধিকাংশ গাড়ি নির্মাতা লাভ করতে পারছে না, শিল্প বিশেষজ্ঞদের ভাষায়। চীনা ইলেকট্রিক গাড়ির দাম শুরু হচ্ছে ১০,০০০ ডলারেরও নিচে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫,০০০ ডলারের নিচে খুব কম মডেলই পাওয়া যায়।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি শিল্প জরিপ অনুযায়ী, অধিকাংশ চীনা ডিলারও লাভ করতে পারছে না, কারণ তাদের শোরুম অতিরিক্ত গাড়িতে ঠাসা। ফলে ডিলাররা দাম কমাতে বাধ্য হচ্ছে। কিছু ডিলার একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ অবিক্রীত গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ও বীমা করে, যাতে গাড়ি নির্মাতারা সেগুলোকে বিক্রি হয়েছে বলে দেখাতে পারে এবং ডিলাররা কারখানার রিবেট ও বোনাস পায়।

অবিক্রীত গাড়ি শেষ পর্যন্ত ‘জেডকার’-এর মতো গ্রে-মার্কেট ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যায়। কিছু গাড়ি টিকটক ধাঁচের সামাজিক মাধ্যমে ‘ফায়ার সেল’-এ বিক্রি হয়। কিছু গাড়িকে ‘ব্যবহৃত’ হিসেবে পুনঃব্র্যান্ডিং করা হয় – যদিও তাদের ওডোমিটারে কোনো মাইলেজ দেখায় না – এবং সেগুলো বিদেশে পাঠানো হয়। কিছু গাড়ি ঝোপঝাড়ে ঢাকা ‘কার গ্রেভইয়ার্ডে’ পড়ে থাকে।

এসব অস্বাভাবিক পদ্ধতি একটি অতিরিক্ত সরবরাহপূর্ণ বাজারের লক্ষণ – এবং অনেক বিশ্লেষকের মতে এটি চীনের রিয়েল এস্টেট ও সোলার ইন্ডাস্ট্রির অস্থিরতার মতো একটি বড় সংকটের ইঙ্গিত দেয়। কারণ সরকার মূলত চাকরি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে বিক্রি ও মার্কেট শেয়ার বাড়াতে চায় – মুনাফা ও টেকসই প্রতিযোগিতাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে।

স্থানীয় সরকারগুলোও কর ও উৎপাদন প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে গাড়ি নির্মাতাদের সস্তা জমি ও ভর্তুকি দেয়, ফলে সারা দেশে অতিরিক্ত উৎপাদনের প্রবণতা বেড়ে যায়।
অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক ম্যাক্রোইকোনমিক বিশ্লেষক ও চীনা ইভি স্টার্টআপের সাবেক কর্মকর্তা রুপার্ট মিচেল বলেন, “যখন বেইজিং থেকে নির্দেশ আসে যে এটি একটি কৌশলগত শিল্প, তখন প্রত্যেক প্রাদেশিক গভর্নরই গাড়ি কারখানা চায়। তারা পার্টির সাথে ভাল অবস্থানে থাকতে চায়। এর ফলাফল হয় যে বিদ্যমান অটো শিল্প দ্বিগুণ বিনিয়োগ করে।”

রয়টার্সের পর্যালোচনায় হাজার হাজার গাড়ি বিক্রির তালিকা, শত শত সরকারি নথি, রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার প্রতিবেদন, আদালতের নথি ও ভোক্তা অভিযোগ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে – কীভাবে অতিরিক্ত সরবরাহ চীনের গাড়ির বাজারকে দুর্বল করে দিচ্ছে, এমনকি যখন এই শিল্প বিশ্বশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। এ ছাড়া ডিলার, ক্রেতা, বিশ্লেষক এবং গাড়ি নির্মাণ কোম্পানির নির্বাহীদের নিয়ে প্রায় ২০ জন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর