দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে পানি কনভেনশনে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে ন্যায্য পানি বণ্টন ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “নদীই আমাদের প্রাণ।” দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে এই কনভেনশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও আঞ্চলিক সহযোগিতায় নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে পানি কনভেনশনে বাংলাদেশ
জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে ন্যায্য পানি বণ্টন ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা জোরদারে বাংলাদেশের আহ্বান
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “নদীই আমাদের প্রাণ”
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর ২০২৫:
বিশ্বব্যাপী পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত United Nations Economic Commission for Europe–এর আওতায় Convention on the Protection and Use of Transboundary Watercourses and International Lakes (জাতিসংঘ পানি কনভেনশন)-এর ষষ্ঠ যৌথ সভায় বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এ আহ্বান জানায়।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জন্য নদী কেবল নদী নয়—নদীই আমাদের প্রাণ। তাই ন্যায্য পানি বণ্টন ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতা বাংলাদেশের টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে জাতিসংঘ পানি কনভেনশনে সদস্যপদ অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি আরও বলেন, “এই সদস্যপদ শুধু কাগুজে অর্জন নয়—এটি বাংলাদেশের জনগণের পানি নিরাপত্তা, আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং বৈশ্বিক পানি ন্যায্যতার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ।”
বাংলাদেশ বিশ্বের বৃহত্তম নদীবাহিত বদ্বীপ—যেখানে গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-মেঘনা অববাহিকার মিলনে দেশের ভূ-প্রকৃতি গঠিত। দেশের মোট পৃষ্ঠজলের ৯০ শতাংশই সীমান্তের বাইরে থেকে প্রবাহিত হয়ে আসে।
নিম্নগতিপ্রবাহী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃসীমান্ত নদীর ন্যায্য ও যুক্তিসংগত ব্যবহার, অংশগ্রহণ ও ‘কোনো ক্ষতি না করার’ নীতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে।
বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও Joint Rivers Commission–এর মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে অববাহিকাভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতা এখনো নীতিগত প্রধান লক্ষ্য।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের কথা তুলে ধরেন—যেখানে নদীগুলিকে “জীবন্ত সত্তা” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “এটি পরিবেশগত ন্যায়বিচারের এক অনন্য দৃষ্টান্ত, যা বৈশ্বিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ নদী রক্ষায় বিস্তৃত নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে। তবে বাস্তবায়নে আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং দূষণ ও লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে।
সরকার ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিরূপণ শুরু করেছে। দুইটি অঞ্চলকে ‘পানি সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যাতে নিরাপদ পানীয় জলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়।
অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আন্তঃমন্ত্রণালয়িক সমন্বয় জোরদারের মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনায় টেকসই ও কার্যকর পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
জেনেভা–এ অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের আন্তঃসীমান্ত নদী ও আন্তর্জাতিক হ্রদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের কনভেনশনের ২০তম পক্ষসভায় বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। বাংলাদেশ আশা প্রকাশ করেছে, এই কনভেনশন সদস্যপদ দেশের জনগণের জন্য “পানি নিরাপত্তা” নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে টেকসই জল ব্যবস্থাপনা ও আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও উৎসাহিত করবে।