জাতিসংঘে ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট ও জুলাই আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

“বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। এই ঐতিহাসিক সাফল্য শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নতুন অনুপ্রেরণা।”

PostImage

জাতিসংঘে ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট ও জুলাই আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস


জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার নিউইয়র্কে ভাষণ দেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান, আন্তর্জাতিক তহবিল বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এবং ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তহবিল সংকটের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে—অতিরিক্ত তহবিল না এলে মাসিক রেশন অর্ধেকে নেমে মাথাপিছু মাত্র ৬ ডলারে দাঁড়াবে, যা রোহিঙ্গাদের অনাহার ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে ফেলবে।”

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান, বিদ্যমান তহবিলের বাইরে নতুন ও বর্ধিত সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে এবং মিয়ানমার সরকার ও রাখাইনের অন্যান্য পক্ষকে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য চাপ দিতে হবে। একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করেন যে মিয়ানমারের চলমান সংঘাত কেবল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনকেও কঠিন করে তুলছে।

ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রান্তিকীকরণের প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যাবে না। বৈষম্যমূলক নীতি ও কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটিয়ে সমঅধিকার, নাগরিকত্ব ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলন তহবিল সংগ্রহ ও কার্যকর রোডম্যাপ তৈরির মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের পথ খুলে দেবে।

একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মঞ্চে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলন—বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, কীভাবে ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে জনগণের গণআন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে এবং একটি নতুন যুগের সূচনা হয়।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে ত্যাগ ও সংগ্রামের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে। এই ঐতিহাসিক সাফল্য শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নতুন অনুপ্রেরণা।”

তাঁর বক্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন করে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে বিশ্বনেতাদের।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর