ট্রাম্প ও শি টিকটক চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-চীন অচলাবস্থা ভাঙতে চান

টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে চালু রাখতে হলে বেইজিংয়ের সম্মতি একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কংগ্রেস আইনে বলেছে, যদি চীনা মালিক বাইটড্যান্স জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে টিকটকের মার্কিন সম্পদ বিক্রি না করে, তবে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যাবে।

PostImage

ট্রাম্প ও শি টিকটক চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র-চীন অচলাবস্থা ভাঙতে চান


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুক্রবার একটি চুক্তির চেষ্টা করবেন, যাতে জনপ্রিয় ভিডিও অ্যাপ টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে চালু থাকে এবং দুই পরাশক্তির মধ্যে চলমান বাণিজ্যিক অচলাবস্থা কিছুটা প্রশমিত হয়।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, নেতাদের মধ্যে গত তিন মাসে এটি প্রথম পরিচিত ফোনালাপ হতে যাচ্ছে, যা শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত হবে। এই আলোচনায় বাণিজ্যের পাশাপাশি টিকটক চুক্তি থাকবে এজেন্ডার শীর্ষে। ট্রাম্প ও শির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা এমন সময়ে আসছে, যখন দুই সরকার সম্ভাব্য সরাসরি বৈঠকের বিষয়ে আলোচনা করছে, যা আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (APEC) সম্মেলনে হতে পারে।

টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে চালু রাখতে হলে বেইজিংয়ের সম্মতি একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কংগ্রেস আইনে বলেছে, যদি চীনা মালিক বাইটড্যান্স জানুয়ারি ২০২৫-এর মধ্যে টিকটকের মার্কিন সম্পদ বিক্রি না করে, তবে অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যাবে।

ট্রাম্প এখন পর্যন্ত আইনটি কার্যকর করেননি। কারণ তার প্রশাসন নতুন মালিক খুঁজছে এবং তিনি মনে করছেন টিকটক নিষিদ্ধ করলে কোটি কোটি মার্কিন ব্যবহারকারী ক্ষুব্ধ হবে এবং রাজনৈতিক যোগাযোগও ব্যাহত হবে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “আমি টিকটক পছন্দ করি; এটা আমাকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করেছে। টিকটকের অসাধারণ মূল্য রয়েছে। এই মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই আছে, কারণ অনুমোদন আমাদেরই দিতে হবে।”

চুক্তি নিয়ে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে—কোম্পানির মালিকানার কাঠামো কী হবে, চীন কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখবে কিংবা কংগ্রেস সেটি অনুমোদন করবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়।

রয়টার্স জানিয়েছে, চুক্তির মাধ্যমে টিকটকের মার্কিন সম্পদ বাইটড্যান্স থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকদের হাতে যাবে। তবে মার্কিন টিকটক এখনো বাইটড্যান্সের অ্যালগরিদম ব্যবহার করবে।
এই ব্যবস্থা মার্কিন আইনপ্রণেতাদের উদ্বিগ্ন করছে, কারণ তাদের আশঙ্কা চীন এর মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের ওপর নজরদারি বা প্রভাব বিস্তার চালাতে পারে। অন্যদিকে চীন বলেছে, অ্যাপটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি—এমন কোনো প্রমাণ নেই।


জমাট বাঁধা সম্পর্ক

ট্রাম্প তার পররাষ্ট্রনীতিকে শান্তি স্থাপন ও চুক্তি করার কৌশল হিসেবে উপস্থাপন করেন। তবুও বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির সম্পর্ক এখনো ঠাণ্ডা। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, “আমরা প্রায় একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। হয়তো আমরা চীনের সঙ্গে একটি বর্ধিত চুক্তি করবো, তবে তা বর্তমান শর্তের ভিত্তিতেই হবে, যেগুলো আসলেই ভালো শর্ত।”

প্রধান ইস্যুগুলির মধ্যে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর ও উন্নত প্রযুক্তি খাতে প্রতিযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে চীন আরও বেশি মার্কিন সয়াবিন ও বোয়িং বিমান কিনুক।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, চীন যেন ফেন্টানিল-সংক্রান্ত রাসায়নিক রপ্তানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওভারডোজ মৃত্যুর একটি বড় কারণ। চীন পাল্টা অভিযোগ করেছে, ওয়াশিংটন বিষয়টিকে বিকৃত করছে।

দুই দেশের অর্থনীতিই বর্তমানে ধীর গতিতে চলছে।
ট্রাম্প জানুয়ারি থেকে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার পর বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর ফলে চীনও পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এপ্রিলে উভয় পক্ষের শুল্ক তিন অঙ্ক ছাড়িয়ে যায়। মে থেকে কয়েক দফা সীমিত চুক্তি হলেও মূল বাণিজ্য যুদ্ধ কেবল সাময়িকভাবে থেমেছে।

এর মধ্যেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের রেয়ার-আর্থ চুম্বক সরবরাহ আটকে দেয়, যা মার্কিন হাইটেক যন্ত্রপাতি তৈরিতে জরুরি। অন্যদিকে ট্রাম্প চীনের সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার, জেট ইঞ্জিন ও কিছু রাসায়নিকের ওপর প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেন।

চীন অধ্যয়নকারী এক থিংক ট্যাঙ্ক CSIS-এর স্কট কেনেডি বলেন, “চীনের কার্যকরী কৌশল—লাঠি (রেয়ার আর্থ) আর গাজর (টিকটক)—তাদের পক্ষে পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিয়েছে।”

ট্রাম্প মনে করেন শুল্ক হলো এমন এক হাতিয়ার, যা হারানো উৎপাদন খাত ফিরিয়ে আনবে, বাজেট ঘাটতি কমাবে, বাণিজ্য ঘাটতি সংশোধন করবে এবং বিদেশি দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মানতে বাধ্য করবে।

তবে এসব সত্ত্বেও চীন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার এবং পণ্য ঘাটতির সবচেয়ে বড় উৎস।

ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, রাশিয়ান তেল আমদানির সঙ্গে সম্পর্কিত চীনা রপ্তানির ওপর তিনি শাস্তিমূলক শুল্ক বসাতে পারেন, যদিও এখনো বাস্তবায়ন করেননি।

তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে আঞ্চলিক উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে, যদিও ওয়াশিংটনের দৃষ্টি মূলত রাশিয়া-ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের দিকেই বেশি।

ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, “রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের কূটনীতি চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের জন্য কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদানে অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।”

ট্রাম্প-শি ফোনালাপের আগেই সদিচ্ছার নিদর্শন হিসেবে চীন ওয়েলস ফারগো ব্যাংকার চেনইয়ে মাও-কে দেশত্যাগের অনুমতি দিয়েছে, যাকে কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসতে দেওয়া হচ্ছিল না।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর