স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন দ্বন্দ্বে সাত বছর পর আংশিকভাবে বন্ধ যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল সরকার

হোয়াইট হাউস মনে করছে, শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের উপরই জনগণের দোষ চাপবে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, “ডেমোক্র্যাটদের জন্য ব্যাখ্যা করা কঠিন হবে কেন তারা সরকার চালু রাখার একটি ‘পরিষ্কার’ বিল সমর্থন করছে না।”

PostImage

স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন দ্বন্দ্বে সাত বছর পর আংশিকভাবে বন্ধ যুক্তরাষ্ট্র ফেডারেল সরকার


ওয়াশিংটন │ ১ অক্টোবর ২০২৫ — প্রায় সাত বছর পর আবারও আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার। বুধবার রাত ১২টা (স্থানীয় সময়) থেকে শুরু হওয়া এই “শাটডাউন”-এর পেছনে রয়েছে কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউসের মধ্যে ব্যয় এবং স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন নিয়ে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা।

প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত ব্যয়বৃদ্ধি বিল পাস হলেও সিনেটে তা ব্যর্থ হয়। বিলটি পাসের জন্য ৬০ ভোট প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা শর্ত হিসেবে স্বাস্থ্যসেবা খাতে কর ক্রেডিট ও “ওবামাকেয়ার” ভর্তুকি সম্প্রসারণ দাবি করেন। দ্বিদলীয় সমঝোতা না হওয়ায় সরকারি অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারি কার্যক্রমে অচলাবস্থা

চুক্তি না হওয়ায় বেশিরভাগ ফেডারেল সংস্থা ও বিভাগে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে। বুধবার সকাল থেকেই সংস্থাগুলো “শাটডাউন প্রক্রিয়া” শুরু করে। লক্ষাধিক কর্মীকে অস্থায়ী ছুটিতে (furlough) পাঠানো হয়েছে এবং অপরিহার্য পরিষেবার কর্মীদের বেতন ছাড়াই কাজ করতে হচ্ছে।

কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (CBO) জানিয়েছে, প্রতিদিন প্রায় ৭,৫০,০০০ কর্মী এ শাটডাউনে প্রভাবিত হবেন এবং তাদের বেতন পরিশোধে করদাতাদের প্রতিদিন প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ হবে।

আইন অনুযায়ী, সরকার পুনরায় চালু হলে কর্মীদের বকেয়া বেতন দেওয়া হবে। ন্যাশনাল পার্ক আংশিকভাবে খোলা থাকলেও নতুন আবেদন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হতে পারে। মেডিকেয়ার ও সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা চলবে।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তুঙ্গে

মাসের পর মাস চলা রাজনৈতিক সংঘাতই এ শাটডাউনের মূল কারণ। ডেমোক্র্যাটরা স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নের সম্প্রসারণ ও ওবামাকেয়ার ভর্তুকির মেয়াদ বাড়াতে চান। পাশাপাশি তারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা অর্থ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা সীমিত করতে চাপ দিচ্ছেন।

অন্যদিকে রিপাবলিকানরা দীর্ঘমেয়াদী আলোচনার ওপর জোর দিচ্ছে। তারা বর্তমান ব্যয় আরও ২১ নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিয়েছিল।

হোয়াইট হাউস মনে করছে, শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের উপরই জনগণের দোষ চাপবে। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, “ডেমোক্র্যাটদের জন্য ব্যাখ্যা করা কঠিন হবে কেন তারা সরকার চালু রাখার একটি ‘পরিষ্কার’ বিল সমর্থন করছে না।”

সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার পাল্টা অভিযোগ করেন, “রিপাবলিকানরা দ্বিদলীয় আলোচনা প্রত্যাখ্যান করে পক্ষপাতমূলক বিল চাপিয়ে দিয়ে এবং স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকি তৈরি করে আমেরিকাকে শাটডাউনের দিকে ঠেলে দিয়েছে।”

জনগণের মধ্যে বিভক্ত মতামত

নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়—২৬% উত্তরদাতা ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের দায়ী করেছেন, ১৯% ডেমোক্র্যাটদের এবং ৩৩% উভয় দলকেই দায়ী করেছেন।

বিতর্কিত এআই ভিডিও

সোমবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিনেটর শুমার ও প্রতিনিধি হাকিম জেফরিসকে উদ্দেশ করে একটি এআই-জেনারেটেড ভিডিও পোস্ট করেন। ভিডিওটি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। জেফরিস বলেন, “আপনি যদি কিছু বলতে চান, তাহলে ওভাল অফিসে এসে সরাসরি বলুন।”
হোয়াইট হাউস পরে ভিডিওটিকে “মজার” বলে দাবি করে।

অচলাবস্থা কবে কাটবে?

সরকার কবে পুনরায় চালু হবে তা এখনো অনিশ্চিত। রিপাবলিকানরা ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো (যেমন মেডিকেডে কাটছাঁট) রক্ষায় অনড়, আর ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার চাপের মুখে।

সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, “শাটডাউন অন্তত আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। হাউস ফিরে না আসা পর্যন্ত কিছুই ঘটবে না। তারপর সবাই বসে সমাধানের পথ খুঁজবে।”

রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও গভীর দলীয় বিভাজনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম আবারও থমকে গেছে। কবে এই শাটডাউন কাটবে এবং ফেডারেল কর্মীরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবেন—সে প্রশ্নে এখনো স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর