বিশ্ব তাকিয়ে আমেরিকার দিকে — ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বদলে যাচ্ছে বাস্তবতা

বর্তমানে শিকাগো, পোর্টল্যান্ড, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ওয়াশিংটন ডিসি-তে সহিংসতা ও অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বল পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ট্রাম্পের এই কঠোর উদ্যোগকে অনেক নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞ স্বাগত জানিয়েছেন।

PostImage

বিশ্ব তাকিয়ে আমেরিকার দিকে — ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বদলে যাচ্ছে বাস্তবতা


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দেখিয়েছেন, কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি দেশের স্বার্থে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা নন। মার্কিন শহরগুলোতে অপরাধ দমন ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে তাঁর ঘোষিত ফেডারেল “অ্যান্টি-ইনসারেকশন আইন” (Insurrection Act) প্রয়োগের সম্ভাবনাকে এখন অনেক বিশ্লেষকই “প্রয়োজনীয় এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ” হিসেবে দেখছেন।

ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই যদি স্থানীয় বা রাজ্য সরকার আইনি জটিলতা বা রাজনৈতিক কারণে ফেডারেল বাহিনী মোতায়েনে বাধা দেয়, তবে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করাই হবে সঠিক পদক্ষেপ।

সোমবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের কাছে ‘Insurrection Act’ কোনো প্রদর্শনীর জন্য নয়। যদি আমেরিকান নাগরিকরা নিহত হয়, আর আদালত বা গভর্নররা আমাদের আটকায়, তাহলে অবশ্যই আমি ব্যবস্থা নেব। দেশ রক্ষা আমার দায়িত্ব।”

আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত

“ইনসারেকশন অ্যাক্ট” মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জরুরি পরিস্থিতিতে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করার বিশেষ ক্ষমতা দেয়। ইতিহাসে এটি অতি সীমিত ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে— সর্বশেষ ১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে সহিংস দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ এই আইন প্রয়োগ করেছিলেন।

বর্তমানে শিকাগো, পোর্টল্যান্ড, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ওয়াশিংটন ডিসি-তে সহিংসতা ও অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসনের দুর্বল পদক্ষেপের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ট্রাম্পের এই কঠোর উদ্যোগকে অনেক নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞ স্বাগত জানিয়েছেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল রিড বলেন, “ডেমোক্র্যাট নেতৃত্বাধীন কিছু শহর বহুদিন ধরে রাজনৈতিক স্বার্থে আইন প্রয়োগে দুর্বলতা দেখিয়েছে। ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত আমেরিকার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাস্তব প্রয়াস।”

“অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকা উচিত”

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ পরামর্শদাতা ও সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জন মিলার বলেন, “আমেরিকা এমন এক সময়ে রয়েছে, যখন অপরাধ, অবৈধ অভিবাসন ও রাজনৈতিক সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ অবস্থায় সেনা মোতায়েন কোনো রাজনৈতিক প্রদর্শনী নয়—এটি জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাস্তব পদক্ষেপ।”

মিলার আরও বলেন, “রাজ্য গভর্নর বা মেয়ররা যদি রাজনৈতিক কারণে ফেডারেল সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে প্রেসিডেন্টের উচিত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ট্রাম্প সেটিই করেছেন।”

ডেমোক্র্যাটদের বিরোধিতা এবং জনসমর্থন

যদিও ইলিনয়ের ডেমোক্র্যাট গভর্নর জে.বি. প্রিটজকার এবং শিকাগোর মেয়র ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন, তবুও স্থানীয় পর্যায়ে অনেক নাগরিকই সেনা মোতায়েনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহিংস অপরাধের পুনরুত্থান এবং ফেডারেল অভিবাসন আইনের লঙ্ঘন শহরগুলোর স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে।

শিকাগোর এক ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “আমরা প্রতিদিন ভয় নিয়ে দোকান খুলে বসি। যদি প্রেসিডেন্ট সেনা পাঠান, তা হলে অন্তত রাস্তায় নিরাপত্তা ফিরবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে জনগণের জীবনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

আইনি দিক ও আদালতের ভূমিকা

সোমবার ইলিনয় ও শিকাগো প্রশাসন ট্রাম্পের নির্দেশ ঠেকাতে মামলা করলেও ফেডারেল বিচারক এপ্রিল পেরি আপাতত সেনা মোতায়েন কার্যক্রম চালু রাখার অনুমতি দিয়েছেন। বুধবার আদালতে সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে ওরেগনের একটি আদালত পোর্টল্যান্ডে সাময়িকভাবে সেনা পাঠানো স্থগিত করেছে, তবে ফেডারেল আইনের অধীনে প্রেসিডেন্টের এই ক্ষমতা নিয়ে আলোচনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

ট্রাম্পের বার্তা: “আমেরিকার শহরগুলো নিরাপদ হবে”

ট্রাম্প বলেন, “আমাদের শহরগুলো অপরাধী, সন্ত্রাসী ও অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয়স্থল হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র আইন ও শৃঙ্খলার দেশ, এবং আমি সেই শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত হয়তো বিতর্ক সৃষ্টি করবে, কিন্তু এটি প্রমাণ করে তিনি “আমেরিকার নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন।”

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর