পারমাণবিক মহড়ার মাঝেই রাশিয়া-বেলারুশের সামরিক মহড়ায় ভারতের অংশগ্রহণ
রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করেছে ভারত, বিশেষ করে চীনকে প্রতিহত করার জন্য। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রাখায় ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন।
পারমাণবিক মহড়ার মাঝেই রাশিয়া-বেলারুশের সামরিক মহড়ায় ভারতের অংশগ্রহণ
মস্কো/বেলারুশ — রাশিয়া নেতৃত্বাধীন “জাপাদ-২০২৫” সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে ভারত। এই মহড়ায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের মহড়া, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন এবং একাধিক মিত্র দেশের সেনাদের উপস্থিতি ছিল।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৬৫ জন সেনা সদস্য এই মহড়ায় যোগ দেয়। রাশিয়া ও বেলারুশ যৌথভাবে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপের মহড়া করে এবং ওরেশনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করে, যা প্রথমবার ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল।
বৈশ্বিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে
এই মহড়া এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক টানাপোড়েনে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি ভারতীয় আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তবুও, শীতল যুদ্ধকালীন সহযোগিতার ভিত্তিতে মস্কোর সঙ্গে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক অটুট রেখেছে নয়াদিল্লি।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, হঠাৎ করে নিজি নোভগোরদ অঞ্চলে গিয়ে মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি জানান, প্রায় ১ লক্ষ সেনা এই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বলেন, “ছোট অস্ত্র থেকে পারমাণবিক ওয়ারহেড পর্যন্ত সবকিছুর মহড়া আমরা চালাচ্ছি। তবে আমরা কাউকে হুমকি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা করছি না।”
আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ
রাশিয়া, বেলারুশ ও ভারতের পাশাপাশি ইরান, বাংলাদেশ, বুরকিনা ফাসো, কঙ্গো ও মালি থেকেও সেনারা অংশ নেয়। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ন্যাটোর প্রতি কড়া বার্তা দিতেই এ ধরনের মহড়া করা হয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর (পেন্টাগন) নিশ্চিত করেছে যে তারা পর্যবেক্ষক পাঠিয়েছিল, এবং এটিকে “সাধারণ সামরিক প্রক্রিয়া” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
ভারতের কূটনৈতিক ভারসাম্য
রাশিয়া ভারতের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও কৌশলগত সম্পর্ক গভীর করেছে ভারত, বিশেষ করে চীনকে প্রতিহত করার জন্য। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে ভারত রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রাখায় ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন।
কুমায়োঁ রেজিমেন্টের অংশগ্রহণ নয়াদিল্লির দ্বৈত নীতির প্রতিফলন, যেখানে মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি ওয়াশিংটনের বিরাগ এড়ানোর চেষ্টা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যিনি এই সপ্তাহে ৭৫তম জন্মদিন পালন করেছেন, ফোনে শুভেচ্ছা পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে। সম্পর্কের টানাপোড়েন সত্ত্বেও মোদি ট্রাম্পকে আবারও “বন্ধু” বলে উল্লেখ করেছেন।
ইরান-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা
এই মহড়ায় ইরানের অংশগ্রহণও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। রাশিয়ার সঙ্গে ইরান সম্প্রতি একটি “সমগ্র কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি” স্বাক্ষর করেছে।
এর আগে ইসরায়েল ইরানে বিমান হামলা চালালে ১২ দিনের যুদ্ধ শুরু হয়, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নেয়। এর পরপরই রাশিয়া-ইরান যৌথ নৌ-মহড়া চালায় কাস্পিয়ান সাগরে, যা দুই দেশের সামরিক জোটকে আরও দৃঢ় করেছে।