মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি জয়লাভ: লাতিনোরা "যেকোনো সময় আটক হওয়ার ঝুঁকিতে"
সুপ্রিম কোর্টের তিনজন উদারপন্থী বিচারক রায়ের বিরোধিতা করেন। বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র লিখেছেন, “প্রশাসন কার্যত ঘোষণা করেছে যে লাতিনোরা— তারা নাগরিক হোক বা না হোক— যদি স্বল্প মজুরির কাজ করেন, তবে তাদের যেকোনো সময় কাজের জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং এজেন্টদের সন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত আটকে রাখা হবে। এই রায় আমাদের সাংবিধানিক স্বাধীনতাকে বিপদের মুখে ফেলেছে। আমি এর প্রতিবাদে ভিন্নমত জানালাম।”
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি জয়লাভ: লাতিনোরা "যেকোনো সময় আটক হওয়ার ঝুঁকিতে"
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট আবারও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতিকে সমর্থন জানিয়েছে। আদালত রায় দিয়েছে, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় অভিবাসন দমন অভিযানে এজেন্টরা জাতিগত পরিচয় বা ভাষার ভিত্তিতে লোকজনকে আটক করতে পারবে। ভিন্নমত পোষণকারী এক বিচারপতি বলেছেন, এর ফলে লাতিনোরা এখন "যেকোনো সময় আটক হওয়ার লক্ষ্যবস্তু" হয়ে গেলেন।
সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের এক আবেদনে সাড়া দিয়ে নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করে। ওই আদেশে বলা হয়েছিল, এজেন্টরা কেবলমাত্র “যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ” থাকলেই কাউকে আটক করতে পারবে— কেবল জাতি, গাত্রবর্ণ, স্প্যানিশ বা উচ্চারণযুক্ত ইংরেজি বলার মতো বিষয়কে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে, তারা দ্রুতই "রোভিং প্যাট্রোল" চালু রাখবে।
সুপ্রিম কোর্টের তিনজন উদারপন্থী বিচারক রায়ের বিরোধিতা করেন। বিচারপতি সোনিয়া সোটোমেয়র লিখেছেন,
“প্রশাসন কার্যত ঘোষণা করেছে যে লাতিনোরা— তারা নাগরিক হোক বা না হোক— যদি স্বল্প মজুরির কাজ করেন, তবে তাদের যেকোনো সময় কাজের জায়গা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে এবং এজেন্টদের সন্তুষ্ট না করা পর্যন্ত আটকে রাখা হবে। এই রায় আমাদের সাংবিধানিক স্বাধীনতাকে বিপদের মুখে ফেলেছে। আমি এর প্রতিবাদে ভিন্নমত জানালাম।”
লস অ্যাঞ্জেলেস-ভিত্তিক মার্কিন জেলা বিচারক মা’মে ফ্রিমপং গত ১১ জুলাই রায় দিয়েছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই অভিযান যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী (অযৌক্তিক তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা) লঙ্ঘন করছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সোমবার তার আদেশ স্থগিত করে।
অ্যাটর্নি জেনারেল প্যাম বন্ডি (ট্রাম্প-নিযুক্ত) একে "বড় জয়" হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এখন এজেন্টরা আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ক্যালিফোর্নিয়ায় রোভিং প্যাট্রোল চালিয়ে যেতে পারবেন।
একটি মামলায় অভিযোগ করা হয়, প্রশাসনের এজেন্টরা মুখোশধারী ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দিনে দুপুরে অভিযানে নামে, যেখানে তল্লাশি ও আটক প্রক্রিয়া অনেকটা "সরাসরি অপহরণের মতো"। বাদীপক্ষের আইনজীবী তাজসার বলেছেন,
“বাদামী চামড়ার মানুষদের হঠাৎ করে অজ্ঞাতনামা ফেডারেল এজেন্টরা অস্ত্রের মুখে দাঁড় করিয়ে পরিচয় ও জন্মস্থান জিজ্ঞাসা করছে। এটি আমাদের কমিউনিটির জন্য ভয়াবহ ধাক্কা।”
বাদীপক্ষের এক সদস্য পেদ্রো ভাসকেজ পেরডোমো বলেন:
“আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করা হয়েছিল। কোনো ওয়ারেন্ট ছিল না। আমাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়, ঠান্ডায়, ক্ষুধার্ত অবস্থায়, আইনজীবী ছাড়াই। এখন সুপ্রিম কোর্ট বলছে, এটা ন্যায্য? এটা ন্যায়বিচার নয়, এটা হলো ব্যাজধারী বর্ণবাদ।”
অন্যদিকে, রায়ের পক্ষে থাকা রক্ষণশীল বিচারপতি ব্রেট কাভানফ লিখেছেন,
“জাতিগত পরিচয় একা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ভিত্তি হতে পারে না, তবে অন্য প্রাসঙ্গিক উপাদানের সঙ্গে এটি বিবেচনা করা যেতে পারে।”
ট্রাম্প প্রশাসন এ বছর একাধিকবার সুপ্রিম কোর্টের কাছে নিম্ন আদালতের বাধা দূর করতে আবেদন করেছে, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে জয় পেয়েছে। এর আগে আদালত প্রশাসনকে অনুমতি দিয়েছে— অভিবাসীদের নিজ দেশের বাইরে অন্য দেশে ফেরত পাঠাতে, কিংবা মানবিক কারণে দেওয়া সাময়িক বৈধ অবস্থান বাতিল করতে।
ব্যাপক বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি
দ্বিতীয় মেয়াদে জয়লাভের সময় ট্রাম্প রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসী বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অভিবাসী মহলে। ব্যাপক বিক্ষোভ ও মামলা-মোকদ্দমার মধ্যেই চলতে থাকে অভিযান।
গত জুনে লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেডারেল অভিবাসন অভিযান ঠেকাতে হওয়া বিক্ষোভ দমনে ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড ও মার্কিন মেরিন মোতায়েন করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সামরিক বাহিনী ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করে।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম (ডেমোক্র্যাট) এই মোতায়েনকে অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন।
বিচারক ফ্রিমপং (যিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক নিয়োজিত) এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বলেছিলেন, কেবলমাত্র জাতি, ভাষা, পেশা বা নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত থাকার কারণে কাউকে আটক করা যাবে না। তার সেই আদেশ আপিল আদালতও বহাল রাখে, তবে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট তা স্থগিত করে দেয়।