বিদায়ের সময় পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানান, “পরেরবার মস্কোতে।”
লাল টাই পরে ট্রাম্প আর মেরুন টাই পরে পুতিন যখন কার্পেটে হাঁটলেন, তখন আকাশে উড়ে গেল এফ-২২ যুদ্ধবিমান আর বি-২ বোমারু। এগুলো তৈরি হয়েছিল একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য।
বিদায়ের সময় পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে জানান, “পরেরবার মস্কোতে।”
আলাস্কা, জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন : প্রথমে ছিল লাল কার্পেট, উষ্ণ করমর্দন আর হাসিমুখ। আকাশে গর্জন তুলল যুদ্ধবিমান।
বার্তা সংস্থা এপি এমনভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, এরপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের প্রেসিডেন্টিয়াল লিমুজিনে একসাথে উঠলেন। বন্ধুর মতো গল্প করতে করতে তারা রওনা হলেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনায়।
এই অভ্যর্থনা সাধারণত আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের জন্য করা হয়। কিন্তু এবার সেটি হলো এমন এক নেতার জন্য, যিনি ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ শুরু করেছেন।
আলোচনা শেষে নীরবতা
কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হলেও ট্রাম্প-পুতিন কোনো প্রশ্ন নিলেন না। কেবল “অগ্রগতি” ও “সমঝোতা”র কথা বললেন, আর একে অপরকে প্রশংসা করলেন। পেছনে লেখা ছিল—“Pursuing Peace” (শান্তির পথে)।
ট্রাম্প এর আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যুদ্ধ থামাতে পারবেন। তিনি পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর জন্য চাপও দিচ্ছিলেন। তবে আলোচনার পর কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসেনি।
লাল কার্পেট আর যুদ্ধবিমান
দীর্ঘ করমর্দন, হাসি আর কাঁধে হাত রেখে কথা বললেন দুই নেতা। প্রায় এক দশক পর মার্কিন মাটিতে পুতিনকে স্বাগত জানালেন ট্রাম্প।
লাল টাই পরে ট্রাম্প আর মেরুন টাই পরে পুতিন যখন কার্পেটে হাঁটলেন, তখন আকাশে উড়ে গেল এফ-২২ যুদ্ধবিমান আর বি-২ বোমারু। এগুলো তৈরি হয়েছিল একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য।
এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও কেউ উত্তর দেননি। একজন চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলেন—“প্রেসিডেন্ট পুতিন, আপনি কি বেসামরিক হত্যা বন্ধ করবেন?” পুতিন কানে ইশারা করে জানালেন তিনি শোনেননি।
পরে ট্রাম্প নিজে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে পুতিনকে লিমুজিনে উঠান। গাড়ির কাচের ভেতরে তাদের হাসিমুখে কথা বলতে দেখা যায়।
জেলেনস্কির সাথে তুলনা
এই অভ্যর্থনা ছিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিপরীত অভিজ্ঞতা। তিনি যখন ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন, ট্রাম্প তাকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন—“তুমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে খেলছো, এটা আমেরিকার প্রতি অসম্মান।”
তখন কোনো যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়নি, এমনকি পরিকল্পিত খনিজ চুক্তিও বাতিল হয়ে যায়।
কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান নয়
আলোচনা শেষে পুতিন প্রথমে বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে “সমঝোতা” হয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আরও বলেন—যদি ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকতেন, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করত না।
ট্রাম্প বলেন, “অনেক বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, শুধু কিছু ছোট বিষয় বাকি।” তবে যুদ্ধবিরতি বা বেসামরিক হত্যার বিষয়ে কিছু বলেননি।
শেষে পুতিন মজা করে ইংরেজিতে বললেন—“পরেরবার মস্কোতে।” দু’জন আবার করমর্দন করে চলে গেলেন।
পেছনে থেকে গেল অনেক অনিশ্চয়তা আর উত্তরহীন প্রশ্ন। তবে শান্তির পথে আনেকদূর এগিয়েছে দুই পরাশক্তি, সেকথা নিশ্চিত।