‘অসাংবিধানিক’ ও ‘অবৈধ’: ট্রাম্পের ক্ষমতা বিস্তারে বিচারকদের কঠোর অবস্থান

বিচারকরা যেসব সিদ্ধান্তে প্রশাসনের পদক্ষেপ আটকে দিয়েছেন তার মধ্যে ছিল—যুদ্ধকালীন Alien Enemies Act ব্যবহার করে দ্রুত বহিষ্কার কার্যক্রম চালানো, ক্যালিফোর্নিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ফেডারেল পর্যায়ে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, হার্ভার্ডের জন্য নির্ধারিত ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত রাখা, এবং লাখ লাখ হাইতিয়ান ও ভেনেজুয়েলান নাগরিকদের জন্য দেওয়া আইনি সুরক্ষিত অবস্থার সমাপ্তি।

PostImage

‘অসাংবিধানিক’ ও ‘অবৈধ’: ট্রাম্পের ক্ষমতা বিস্তারে বিচারকদের কঠোর অবস্থান


গত কয়েক মাসের মধ্যে আদালতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য এটি ছিল সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ। এর আগে গত সপ্তাহেও প্রশাসন বড় ধরনের এক আইনি পরাজয়ের মুখে পড়ে, যখন আপিল আদালত তার আরোপিত কিছু শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করে। সুপ্রিম কোর্টে একাধিক উচ্চপ্রোফাইল মামলায় সফল হওয়ার পরও এ সপ্তাহে ফেডারেল আদালত ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকটি উদ্যোগ আটকে দিয়েছে এবং বিচারকরা তার পদক্ষেপগুলোকে "অবৈধ" ও "অসাংবিধানিক" বলে মন্তব্য করেছেন।

বিচারকরা যেসব সিদ্ধান্তে প্রশাসনের পদক্ষেপ আটকে দিয়েছেন তার মধ্যে ছিল—যুদ্ধকালীন Alien Enemies Act ব্যবহার করে দ্রুত বহিষ্কার কার্যক্রম চালানো, ক্যালিফোর্নিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ফেডারেল পর্যায়ে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন, হার্ভার্ডের জন্য নির্ধারিত ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত রাখা, এবং লাখ লাখ হাইতিয়ান ও ভেনেজুয়েলান নাগরিকদের জন্য দেওয়া আইনি সুরক্ষিত অবস্থার সমাপ্তি।

এটি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের জন্য আদালতে সবচেয়ে খারাপ সময়গুলোর একটি—যা তার শুল্ক সংক্রান্ত আইনি পরাজয়ের পরপরই ঘটল। ট্রাম্প ইতোমধ্যে সেই রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন এবং বলেছেন, যদি তা বহাল থাকে তবে তা হবে একটি "বিপর্যয়"।

NBC নিউজের এক সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২২টি মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের জরুরি আবেদনের মধ্যে ১৭টিতেই সুপ্রিম কোর্ট তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে ফেডারেল সরকারকে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছেন। এক হোয়াইট হাউস-সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মে মাসে বলেছিলেন, “আদালতগুলো তাদের সব পদক্ষেপ বাতিল করবে না, এবং দিনের শেষে তারা এত বেশি পদক্ষেপ নেবে যে অনেক কিছুই টিকে যাবে।”

রায়গুলো নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ফেক নিউজ NBC বামপন্থী বর্ণনা নতুনভাবে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাস্তবতা হলো: প্রায় ২০টি সুপ্রিম কোর্ট বিজয়ের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলোকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, যদিও একের পর এক অবৈধ নিম্ন আদালতের রায় এসেছে। এই জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে।”


সাম্প্রতিক কিছু আইনি পরাজয়:

হার্ভার্ড তহবিল স্থগিতকরণ ‘আদর্শগত হামলা’ — বিচারক
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলার শুনানিতে বিচারক বলেন, সরকারের তহবিল স্থগিতকরণ পদক্ষেপ ছিল “প্রথম সংশোধনী লঙ্ঘনকারী” এবং “অসাংবিধানিক চাপ প্রয়োগ।”

প্রশাসনের দাবি ছিল, হার্ভার্ডে ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ার কারণে ২ বিলিয়ন ডলারের তহবিল ফ্রিজ করা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন জেলা বিচারক অ্যালিসন ডি. বারোস বুধবার তার রায়ে বলেন, এই দাবি “অজুহাতের গন্ধময়।”

তিনি উল্লেখ করেন, যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হার্ভার্ডে ইহুদিবিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে বিশ্ববিদ্যালয় তা মোকাবিলায় কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, হোয়াইট হাউস যেসব পরিবর্তন চাইছিল তার অধিকাংশের সঙ্গেই ইহুদিবিদ্বেষের কোনো সম্পর্ক নেই, বরং যেসব অনুদান বাতিল করা হয়েছিল সেগুলো ক্যানসার গবেষণা, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ও ভেটেরানদের স্বাস্থ্যসেবার মতো বিষয়ক প্রকল্পে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

বিচারক প্রশাসনকে অভিযুক্ত করেন যে, তারা “ইহুদিবিদ্বেষকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে আদর্শগত হামলা চালিয়েছে, যা APA, প্রথম সংশোধনী ও টাইটেল VI লঙ্ঘন করে।”

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।


লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ‘অবৈধ’ — বিচারক
মঙ্গলবার, ক্যালিফোর্নিয়ার এক ফেডারেল বিচারক রায় দেন যে প্রশাসন ১৯শ শতাব্দীর আইন লঙ্ঘন করেছে, যা বেসামরিক আইন প্রয়োগে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।

প্রশাসন জুন মাসে ন্যাশনাল গার্ড ও শত শত মেরিনকে লস অ্যাঞ্জেলেসে মোতায়েন করে, যখন হাজারো মানুষ ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নামেন।

সরকার দাবি করেছিল, কিছু বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠায় ফেডারেল সম্পদ ও কর্মীদের রক্ষায় সেনা মোতায়েন জরুরি ছিল।

কিন্তু মার্কিন জেলা বিচারক চার্লস ব্রেয়ার তার ৫২ পৃষ্ঠার রায়ে বলেন, সেনারা শুধুমাত্র নিরাপত্তা রক্ষায় সীমাবদ্ধ ছিল না; তারা রাস্তার ব্লক, ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও সামরিক উপস্থিতি প্রদর্শন করেছে, যা Posse Comitatus Act-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন। ১৮৭৮ সালের এ আইনে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া অভ্যন্তরীণভাবে সেনা ব্যবহার নিষিদ্ধ।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর