মার্কিন সতর্কবার্তা: বিদেশি অপরাধী গোষ্ঠী উড়িয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র
“রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন, তিনি এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান, কারণ তারা গত ৩০ বছর ধরে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে, অথচ কেউ এর জবাব দেয়নি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারগুলো সহযোগিতা করবে বলে সামরিক পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়বে না।”
মার্কিন সতর্কবার্তা: বিদেশি অপরাধী গোষ্ঠী উড়িয়ে দেবে যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি অপরাধী গোষ্ঠীগুলোকে “উড়িয়ে দেবে”, এমনকি অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতায়ও তা করা হতে পারে।
রুবিও ইকুয়েডর সফরের সময় বলেন,
“এখন তারা আমাদের সাহায্য করবে এই লোকগুলোকে খুঁজে বের করতে এবং প্রয়োজনে উড়িয়ে দিতে।”
তিনি আরও ঘোষণা করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইকুয়েডরের দুই বৃহত্তম অপরাধী চক্র লস লোবোস এবং লস চোনেরোস-কে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করবে।
এই মন্তব্যটি আসে কয়েকদিন পরেই, যখন মার্কিন বাহিনী ক্যারিবিয়ান সাগরে এক নৌযানে হামলা চালায়। হোয়াইট হাউস জানায়, এতে ১১ জন মাদক পাচারকারী নিহত হয়েছে, যদিও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশ—যেমন মেক্সিকো ও ইকুয়েডর—থেকে আসা চোরাকারবারিরা মার্কিন বাহিনীর “একতরফা টার্গেট” হতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নে রুবিও বলেন, “সহযোগী সরকারগুলো এই চোরাকারবারিদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।”
তিনি আরও বলেন,
“রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছেন, তিনি এই গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চান, কারণ তারা গত ৩০ বছর ধরে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে, অথচ কেউ এর জবাব দেয়নি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারগুলো সহযোগিতা করবে বলে সামরিক পদক্ষেপের প্রয়োজন পড়বে না।”
তবে ইকুয়েডর ও মেক্সিকো সরকার এখনো বলেনি তারা মার্কিন সামরিক হামলায় সহায়তা করবে কিনা।
মঙ্গলবার দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ওই নৌযানে হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, অভিযানে ভেনেজুয়েলার গ্যাং ট্রেন দে আরাগুয়া-এর সদস্যদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যারা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে অবৈধ মাদক বহন করছিল।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বিবিসি ভেরিফাইকে বলেছেন, এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও সামুদ্রিক আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর অভিযোগ করে, ভেনেজুয়েলার দুটি সামরিক বিমান একটি মার্কিন নৌযানের কাছে “অত্যন্ত উসকানিমূলক ভঙ্গিতে” উড়ে আসে—যার উদ্দেশ্য ছিল তাদের “নার্কো-টেরর বিরোধী অভিযানে বাধা দেওয়া।” ভেনেজুয়েলা এ বিষয়ে এখনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এছাড়া বৃহস্পতিবার রুবিও ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র ইকুয়েডরকে নিরাপত্তা সহায়তায় ১৩.৫ মিলিয়ন ডলার এবং মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য ৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ড্রোন প্রযুক্তি সরবরাহ করবে।
গত কয়েক বছরে ইকুয়েডরে সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে, কারণ অপরাধী গোষ্ঠীগুলো লাভজনক কোকেন রুটের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৭০ শতাংশ কোকেন ইকুয়েডরের মধ্য দিয়ে পার হয়—যা প্রতিবেশী উৎপাদনকারী দেশ কলম্বিয়া ও পেরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে পৌঁছায়।
এই সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্তি ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়া-র অনুরোধে করা হয়েছে। তিনি অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তার দমন অভিযানকে “যুদ্ধ” বলে অভিহিত করেছেন।
এ বছরের শুরুর দিকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবোয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি লস লোবোস ও লস চোনেরোসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে তবে তিনি “খুশি” হবেন, কারণ “তারা আসলেই তাই।” তিনি আরও বলেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সেনারা তার এই লড়াইয়ে যোগ দিক।
নোবোয়া ইকুয়েডরের সংবিধান পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছেন, যাতে আবার বিদেশি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া যায়—যা সর্বশেষ ২০০৯ সালে বন্ধ করা হয়েছিল।
এই সন্ত্রাসী তালিকাভুক্তির অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কারো সম্পদ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবে এবং কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়াই ইকুয়েডর সরকারকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করতে পারবে, যার মাধ্যমে “সম্ভাব্য প্রাণঘাতী পদক্ষেপ” নেওয়া সম্ভব।
ইকুয়েডরে বাড়তে থাকা কার্টেল সহিংসতা দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্টেলগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হলে, তা তাদের শিকারদের আশ্রয় প্রাপ্তির সুযোগ বাড়াবে না কমাবে—তা এখনো স্পষ্ট নয়। একদিকে, এর মানে হতে পারে তারা এখন “সন্ত্রাসবাদের শিকার”, কিন্তু অন্যদিকে অনেকে আশঙ্কা করছেন, যারা বাধ্য হয়ে গ্যাংগুলোকে চাঁদা দিয়েছে তাদেরকেও “সন্ত্রাসীদের সহযোগী” হিসেবে শাস্তির মুখোমুখি হতে হতে পারে।