ট্রাম্প-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝে মোদি-চীন-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা
আমরা হয়তো এক দীর্ঘ নিম্নমুখী টানাপোড়েনে আটকে পড়েছি, কারণ কোন নেতা-ই সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিতে আগ্রহী নন।"
ট্রাম্প-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝে মোদি-চীন-রাশিয়া ঘনিষ্ঠতা
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আয়োজিত এক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত ধরে হাঁটার দৃশ্য যেন নিশ্চিত করল—যুক্তরাষ্ট্রের ভারতকে কূটনৈতিক বলয়ে টানার প্রচেষ্টা বড় ধাক্কা খেয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে একের পর এক মার্কিন প্রশাসন ভারতকে চীন ও রাশিয়ার কৌশলগত পাল্টা ভারসাম্য হিসেবে পাশে টানার চেষ্টা করেছে। কিন্তু টিয়ানজিনে মোদির উপস্থিতি ও দৃশ্যমান বন্ধুত্ব ইঙ্গিত দেয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপেই সেই লক্ষ্য আপাতত ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের পণ্যে ৫০% শুল্ক বসানো এবং সস্তায় রাশিয়ান তেল কেনাকে প্রকাশ্যে সমালোচনা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি, শত্রুদের একজোট হওয়া
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যখন খারাপ হচ্ছে, তখনই চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নেতারা একসঙ্গে প্রকাশ্যে উপস্থিত হন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। এদিকে মোদি যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত দিচ্ছেন—মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও বাড়াতে এবং বেইজিংয়ের প্রতি সন্দেহ কাটিয়ে উঠতে তিনি প্রস্তুত।
কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর গবেষক ও সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা অ্যাশলি টেলিস বলেন,
"আমরা হয়তো এক দীর্ঘ নিম্নমুখী টানাপোড়েনে আটকে পড়েছি, কারণ কোন নেতা-ই সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিতে আগ্রহী নন।"
ভারতের ক্ষোভ
ভারতের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বারবার বাণিজ্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, পাকিস্তানকে সম্মানিত করা, এমনকি ভারত-পাকিস্তানের দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্ব মীমাংসার কৃতিত্ব ট্রাম্প নিজের কাঁধে নেয়ায়।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশেষজ্ঞ তনভি মাদান বলেন,
"যুক্তরাষ্ট্র যখন শি ও পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের নিজস্ব সৌহার্দ্য জাহির করছে, তখন ভারতের প্রতি সমালোচনা ভারতীয়দের কাছে অদ্ভুত মনে হচ্ছে।"
হোয়াইট হাউসের বক্তব্য
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আনা কেলি বলেন, ট্রাম্পের কূটনৈতিক রেকর্ড অতুলনীয় কারণ তিনি "চোখে চোখ রেখে আমেরিকান জনগণের জন্য ভালো চুক্তি করেছেন," যার মধ্যে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিও রয়েছে। তিনি দাবি করেন, মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে সম্মানজনক সম্পর্ক বিদ্যমান এবং দুই দেশের দলসমূহ কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছে।
চীন বনাম ভারত
মোদি ও শি জিনপিংয়ের সম্পর্কোন্নতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত সংঘাত ও অবিশ্বাস বিদ্যমান। ২০২০ সালে সীমান্তে সংঘর্ষ হয়েছিল। সাত বছর পর এই প্রথম মোদি চীন সফরে গেলেন।
ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছেন:
"আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক রাখি। কিন্তু আপনাদের বুঝতে হবে, বহু বছর ধরে এটি ছিল একতরফা সম্পর্ক।"
ব্রিকস ও ট্রাম্পের মনোভাব
চীন, ভারত ও রাশিয়া ব্রিকস জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ট্রাম্প একে "অ্যান্টি-আমেরিকান" ব্লক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ব্রাজিলকেও তিনি সমালোচনার মুখে ফেলেছেন, শুল্ক আরোপ করেছেন এবং বলসোনারো প্রসঙ্গে "উইচ হান্ট" অভিযোগ করেছেন।
হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো বলেন,
"বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতের নেতা মোদিকে পুতিন ও শি জিনপিংয়ের মতো স্বৈরশাসকদের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা লজ্জাজনক।"
কোয়াড জোটের ঝুঁকি
ট্রাম্প ২০১৯ সালে মোদির সঙ্গে টেক্সাসে "হাউডি মোদি" শো করেছিলেন এবং কোয়াড জোটকে পুনর্জাগ্রত করেছিলেন। কিন্তু পুনর্নির্বাচনের পর তিনি শুল্ক ও অভিবাসন নিয়ে ভারতকে আক্রমণ করেন।
ভারত নভেম্বরে কোয়াড সম্মেলনের আয়োজন করতে চেয়েছিল, যেখানে চীনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা এজেন্ডা বেশি গুরুত্ব পেত। কিন্তু ট্রাম্প এখনও ভারত সফরের পরিকল্পনা করেননি। তিনি বরং নভেম্বরের মধ্যে চীনের সঙ্গে একটি বড় শুল্ক চুক্তি করতে চাইছেন।
শেষকথা
সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা ব্রেট ব্রুয়েন বলেন,
"ভারত এমন একটি দেশ যা ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে ট্রাম্পের কাছে মাথা নোয়াবে না। তাদের হাতে অন্য বিকল্প রয়েছে।"