নোবেল পুরস্কার ও ফোনালাপে উত্তেজনা: ট্রাম্প-মোদির সম্পর্ক ভাঙনের গল্প
গত জুনের ১৭ তারিখে এক ফোনালাপে ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, তিনি ভারত-পাকিস্তান সংঘাত মিটিয়ে দিয়েছেন এবং পাকিস্তান তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবে। মোদিকে ইঙ্গিত দেন—তিনিও যেন এমন মনোনয়ন বিবেচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোজাসুজি আপত্তি জানিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি শুধুই ভারত ও পাকিস্তানের সরাসরি আলোচনার ফল, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। এই বক্তব্যে ট্রাম্প অসন্তুষ্ট হলেও মোদির অনাগ্রহ স্পষ্ট করে দেয়—দুই নেতার মধ্যে বিশ্বাসের সেতু ভেঙে যাচ্ছে।
নোবেল পুরস্কার ও ফোনালাপে উত্তেজনা: ট্রাম্প-মোদির সম্পর্ক ভাঙনের গল্প
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কে একসময় যে উষ্ণতা দেখা গিয়েছিল, তা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে তার একতরফা মধ্যস্থতার দাবি এই সম্পর্কে চির ধরিয়েছে।
নোবেল পুরস্কার প্রসঙ্গে উত্তপ্ত ফোনালাপ
গত জুনের ১৭ তারিখে এক ফোনালাপে ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, তিনি ভারত-পাকিস্তান সংঘাত মিটিয়ে দিয়েছেন এবং পাকিস্তান তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবে। মোদিকে ইঙ্গিত দেন—তিনিও যেন এমন মনোনয়ন বিবেচনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোজাসুজি আপত্তি জানিয়ে বলেন, সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি শুধুই ভারত ও পাকিস্তানের সরাসরি আলোচনার ফল, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। এই বক্তব্যে ট্রাম্প অসন্তুষ্ট হলেও মোদির অনাগ্রহ স্পষ্ট করে দেয়—দুই নেতার মধ্যে বিশ্বাসের সেতু ভেঙে যাচ্ছে।
শুল্ক বাড়ানো ও বাণিজ্যে ধাক্কা
ফোনালাপের পরপরই সম্পর্কের টানাপোড়েন আরও স্পষ্ট হয়। ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। এর সঙ্গে রাশিয়া থেকে তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান তিনি। ফলে ভারতের রপ্তানি খাতে একযোগে ৫০ শতাংশ চাপ তৈরি হয়।
মোদি, যিনি একসময় ট্রাম্পকে “সত্যিকারের বন্ধু” বলে অভিহিত করেছিলেন, প্রকাশ্যে তার থেকে দূরত্ব তৈরি করেন। পরবর্তীতে ট্রাম্পের ভারত সফরের পরিকল্পনাও বাতিল হয়ে যায়।
ভারতে ট্রাম্প-বিরোধী ক্ষোভ
ভারতে ট্রাম্প এখন অনেকের কাছে অপমানের প্রতীক। মহারাষ্ট্রের এক উৎসবে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়, যেখানে তাকে “বিশ্বাসঘাতক” আখ্যা দেওয়া হয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা মার্কিন নীতিকে সরাসরি “গুণ্ডাগিরি” বলে অভিহিত করেছেন।
ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ
বিশ্লেষকরা মনে করেন, মূলত এটি দুই শক্তিশালী ও জনতাবাদী নেতার ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ। ট্রাম্পের নোবেল শান্তি পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং পাকিস্তান ইস্যুতে ভারতের নীতিগত অবস্থান—এই দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করে তোলে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক তন্বি মাদান বলেন, “ভারতের কূটনৈতিক নীতি বরাবরই বলে—পাকিস্তান ইস্যুতে তৃতীয় পক্ষের কোনো মধ্যস্থতা গ্রহণযোগ্য নয়। মোদির ব্যক্তিত্বও সেটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
সম্পর্কের পরিণতি
ট্রাম্পের একতরফা দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় অঘোষিত বার্তা, এবং মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা ভারতের আস্থাকে নষ্ট করেছে। শেষ পর্যন্ত মোদি ট্রাম্পের ফোন ধরাও বন্ধ করে দেন।
এখন মোদি “আত্মনির্ভর ভারত” ও “মেক ইন ইন্ডিয়া” কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের দিকে ঝুঁকছেন। এ সপ্তাহেই তার বেইজিং সফরের কথা রয়েছে, যেখানে শি জিনপিং ও ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি।