ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্ক ‘অবৈধ’ ঘোষণা আপিল আদালতের

সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে মামলাটি, ঝুঁকিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি

PostImage

ট্রাম্পের বৈশ্বিক শুল্ক ‘অবৈধ’ ঘোষণা আপিল আদালতের


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জারি করা বৈশ্বিক শুল্ককে অবৈধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত। আদালত রায়ে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের এমন শুল্ক আরোপের এখতিয়ার নেই। কর ও শুল্ক আরোপের পূর্ণ ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের হাতেই থাকবে।

শুক্রবার সাত-চার ভোটে দেওয়া এই রায়ে আদালত বলেছে, আইইইপিএ কোথাও ‘শুল্ক’ বা তার প্রতিশব্দ উল্লেখ করেনি। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সীমাহীন শুল্ক আরোপের ক্ষমতায় কোনো প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা নেই। ফলে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপকে আদালত “আইনের পরিপন্থী ও অবৈধ” বলে ঘোষণা করেছে।

বৈশ্বিক প্রভাব ও শুল্ক বাতিলের পরিধি

এই রায়ের ফলে বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ বৈশ্বিক শুল্ক বাতিল হচ্ছে। একইসঙ্গে চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর আরোপিত পারস্পরিক শুল্কও এর আওতায় পড়বে। তবে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে আরোপিত শুল্ক বহাল থাকবে, কারণ সেগুলো ভিন্ন ক্ষমতাবলে কার্যকর হয়েছিল।

বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে যেসব দেশ ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুল্ক কমানোর চুক্তি করেছিল, সেই চুক্তিগুলোর ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ট্রাম্পের অবস্থান

রায় ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি লিখেছেন, “অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট একটি আপিল আদালত ভুলভাবে বলেছে আমাদের শুল্ক তুলে নেওয়া উচিত। কিন্তু তারা জানে, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই জয়ী হবে।”

তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “এই শুল্ক যদি কখনো তুলে নেওয়া হয়, তা হবে দেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়। এতে আমেরিকা আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু আমাদের শক্তিশালী থাকতে হবে।”

ট্রাম্প তার প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরে দাবি করেন, বৈশ্বিক বাণিজ্য ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই তিনি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে আইইইপিএ’র অধীনে শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

আইনি লড়াইয়ের পটভূমি

গত এপ্রিলে দেওয়া এক নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশ মূল শুল্ক আরোপ করেন। পরে নিউইয়র্কভিত্তিক কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড মে মাসে রায় দিয়েছিল যে এসব শুল্ক অবৈধ। তবে আপিল প্রক্রিয়া চলমান থাকায় সেই রায় কার্যকর হয়নি।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের জোট এই শুল্ককে চ্যালেঞ্জ জানায়। তাদের করা দুটি মামলার প্রেক্ষিতেই ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত এ রায় দেয়।

প্রশাসনের সতর্কতা

রায় ঘোষণার আগে হোয়াইট হাউসের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এসব শুল্ক বাতিল করা হলে তা যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯২৯ সালের মহামন্দার মতো আর্থিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এক চিঠিতে তারা উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা হঠাৎ বাতিল করা হলে জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থনীতি ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

তাদের মতে, যদি এসব শুল্ক বাতিল হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশি দেশগুলোর কাছে অঙ্গীকার করা ট্রিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে হতে পারে, যা অর্থনৈতিক ধ্বংস ডেকে আনবে।

সামনে কী অপেক্ষা করছে?

রায় কার্যকর হবে ১৪ অক্টোবরের পর। এর আগে প্রশাসন চাইলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারবে। সর্বোচ্চ আদালতে নয়জন বিচারপতি ঠিক করবেন—ট্রাম্পের শুল্ক কর্মসূচি আইনসিদ্ধ ছিল কিনা, নাকি এটি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আরেকটি নজির।

যদিও আপিল আদালতে ট্রাম্প হেরে গেছেন, হোয়াইট হাউস কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছে এই ভেবে যে আদালতের ১১ জন বিচারপতির মধ্যে মাত্র তিনজন রিপাবলিকানদের মনোনীত। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে ছয়জন রিপাবলিকান মনোনীত বিচারপতি রয়েছেন, যার মধ্যে তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই।

ফলে সর্বোচ্চ আদালতে মামলার ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত হলেও রাজনৈতিক প্রভাব সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা