জাতিসংঘ হাইকমিশনার টার্কের প্রতি সমর্থন জানালেন মহাসচিব গুতেরেস
জাতিসংঘ কর্মীদের চাপ: গাজায় যুদ্ধকে গণহত্যা ঘোষণা করার আহ্বান
জাতিসংঘ হাইকমিশনার টার্কের প্রতি সমর্থন জানালেন মহাসচিব গুতেরেস
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টার্ককে উদ্দেশ্য করে জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের শত শত কর্মী গাজার যুদ্ধকে প্রকাশ্যে "চলমান গণহত্যা" হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিষয়টি রয়টার্স এর হাতে আসা একটি চিঠিতে উঠে এসেছে।
বুধবার পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষিতে গাজায় সংঘটিত সহিংসতার মাত্রা, পরিধি ও প্রকৃতি বিবেচনা করে গণহত্যার আইনি শর্ত পূরণ হয়েছে। “গণহত্যার কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ্যে নিন্দা জানানোতে OHCHR-এর শক্তিশালী আইনি ও নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে,” চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এটি স্টাফ কমিটি কর্তৃক প্রণীত এবং ৫০০-র বেশি কর্মীর পক্ষে স্বাক্ষরিত।
চিঠিতে আরও বলা হয়,
“চলমান গণহত্যাকে নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হলে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে।”
এতে ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডার গণহত্যার সময় জাতিসংঘ যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ার উদাহরণ টেনে আনা হয়েছে, যেখানে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস টার্কের প্রতি পূর্ণ ও নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছেন বলে জানান জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান দুজারিক। তিনি বলেন, “কোনো ঘটনার গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কেবলমাত্র একটি উপযুক্ত আইনি কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার।”
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ কর্মীদের চিঠির প্রতিক্রিয়া জানাবে না—“যদিও সেগুলো মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং ইসরায়েলের প্রতি অন্ধ ঘৃণায় পরিপূর্ণ।”
ইসরায়েলি অবস্থান
ইসরায়েল পূর্বে থেকেই গাজায় গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের আক্রমণে ১,২০০ মানুষ নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হওয়ার পর তারা আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করছে।
এর পর থেকে চলা যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৩,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব। অপরদিকে একটি বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানিয়েছে, গাজার কিছু অঞ্চল দুর্ভিক্ষে ভুগছে।
১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত জেনেভাভিত্তিক এই সংস্থার (OHCHR) কাজ হলো সবার মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচার। প্রায় ২,০০০ জন কর্মীর মধ্যে এক-চতুর্থাংশ এই আবেদনকে সমর্থন করেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো কিছু অধিকার সংগঠন ইতিমধ্যেই ইসরায়েলকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। স্বাধীন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেসকা আলবানিজও একই শব্দ ব্যবহার করেছেন, যদিও জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে তা করেনি।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা পূর্বে বলেছিলেন, গণহত্যা নির্ধারণের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক আদালতের।
২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গাজার ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে তোলে, তবে মামলার মূল বিষয় এখনো শোনা হয়নি—যা বছরের পর বছর সময় নিতে পারে।
‘অন্তরে নাড়া দিয়েছে’
“গাজার পরিস্থিতি আমাদের অন্তরে নাড়া দিয়েছে,” বলেন OHCHR-এর মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তিনি জানান, মাঠপর্যায়ে দলগুলো অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সতর্কতা জারি করছে। “এই চিঠির প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ আলোচনাগুলো চলছিল এবং চলবে,” তিনি যোগ করেন।
টার্ক, যিনি ইতিমধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে আসছেন এবং সম্ভাব্য ‘অত্যাচারী অপরাধ’ বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করেছেন, তিনি বলেন এই চিঠি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরেছে।
তার জবাবে তিনি লিখেছেন,
“আমি জানি আমরা সবাই যে ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করছি তাতে নৈতিক ক্ষোভ অনুভব করছি, একইসাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতায় হতাশ। … এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমাদের অফিস হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
রিপোর্টিং: এমা ফার্জ (জেনেভা) | অতিরিক্ত রিপোর্টিং: আলেকজান্ডার কর্নওয়েল (জেরুজালেম) | সম্পাদনা: শ্যারন সিঙ্গেলটন, হিউ লসন, ম্যাথিউ লুইস