মাস্কাটে বৈঠক: সার্ক পুনরুজ্জীবন প্রসঙ্গে ভারতের সতর্কবার্তা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এর আগেও সার্ককে জিইয়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার প্রকাশ্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে গত প্রায় এক দশক ধরে পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দ্বের কারণে সার্ক কার্যত স্থবির হয়ে রয়েছে।

PostImage

মাস্কাটে বৈঠক: সার্ক পুনরুজ্জীবন প্রসঙ্গে ভারতের সতর্কবার্তা


মাস্কাটে ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্সের অবকাশে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর বৈঠকে বসেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট বা সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়টি উত্থাপিত হয়।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এর আগেও সার্ককে জিইয়ে তোলার আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার প্রকাশ্যে এ বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে গত প্রায় এক দশক ধরে পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দ্বের কারণে সার্ক কার্যত স্থবির হয়ে রয়েছে।

সূত্র মতে, মাস্কাট বৈঠকে এস জয়শংকর স্পষ্টভাবে জানান— “এ মুহূর্তে সার্ক প্রসঙ্গ তোলা বাস্তবসম্মত নয়।” তিনি ইঙ্গিত দেন, কোন দেশের কারণে এ প্ল্যাটফর্ম অচল হয়ে আছে, তা সবাই জানে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার দাবি তুললে ভারত সেটিকে পাকিস্তানের সঙ্গে অবস্থান মেলানো হিসেবেই দেখবে।

বিশ্লেষণ: সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের জন্য

বাংলাদেশ যদি সার্ক পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে অতিরিক্ত জোর দেয়, তবে ভারতের বিরাগভাজন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সামনে কয়েকটি বাস্তব সমস্যা দেখা দিতে পারে—

  1. অর্থনৈতিক সম্পর্কের চাপ:
    ভারত বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার। সীমান্ত বাণিজ্য, ট্রানজিট, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি আমদানি—সবকিছুতেই ভারতের সহযোগিতা নির্ভরশীল। সম্পর্ক শীতল হলে এসব ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

  2. কূটনৈতিক ভারসাম্যহীনতা:
    বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ভারত সরাসরি বা পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের প্রতি কোনো ‘ঘনিষ্ঠ অবস্থান’ ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে সন্দেহজনক করে তুলতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

  3. আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা:
    সন্ত্রাস দমন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সহযোগিতায় ভারত বাংলাদেশের একটি প্রধান অংশীদার। সম্পর্কের টানাপোড়েন হলে নিরাপত্তা খাতে চাপ তৈরি হতে পারে।

  4. আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রভাব:
    বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব দীর্ঘদিনের বাস্তবতা। ভারতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হলে তা দেশের ভেতরকার রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন বিভাজন তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশ সার্ককে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গুরুত্ব দিলেও ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এই ইস্যু কূটনৈতিক সংবেদনশীলতায় ঘেরা। ফলে সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে ঢাকা যদি অতিরিক্ত অগ্রসর হয়, তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে—যা অর্থনীতি থেকে শুরু করে কূটনৈতিক অবস্থান পর্যন্ত বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর