ট্রাম্পের ভারতের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক কার্যকর, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যেসব রপ্তানিকারক নতুন শুল্কের আঘাতে পড়বেন, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং চীন, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো বাজারে বৈচিত্র্য আনার জন্য উৎসাহিত করা হবে।

PostImage

ট্রাম্পের ভারতের ওপর দ্বিগুণ শুল্ক কার্যকর, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারতের পণ্যের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ হয়ে সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত কার্যকর হয়েছে বুধবার থেকে। বিশ্বের দুই বৃহৎ গণতন্ত্র ও কৌশলগত অংশীদারের মধ্যে এই পদক্ষেপ নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে।

রাশিয়ার তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর আগে আরোপিত ২৫% শুল্কের সঙ্গে ট্রাম্প এবার আরও ২৫% বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ৫০%। এর আওতায় পোশাক, রত্ন ও গহনা, জুতা, ক্রীড়াসামগ্রী, আসবাবপত্র এবং কেমিক্যালসহ অসংখ্য খাত পড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ শুল্ক হার এখন ব্রাজিল ও চীনের সমপর্যায়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন এই শুল্ক ভারতের হাজারো ক্ষুদ্র রপ্তানিকারক ও চাকরির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাতে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যেসব রপ্তানিকারক নতুন শুল্কের আঘাতে পড়বেন, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং চীন, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো বাজারে বৈচিত্র্য আনার জন্য উৎসাহিত করা হবে।

মার্কিন কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২:০১ মিনিট (EDT) পর্যন্ত যেসব ভারতীয় পণ্য জাহাজে করে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রগামী পথে রয়েছে, সেগুলো পূর্বের নিম্ন শুল্কে প্রবেশ করতে পারবে। তবে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, যাত্রীবাহী গাড়ি, তামা ও সংশ্লিষ্ট কিছু পণ্য ইতোমধ্যেই জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে (Section 232) সর্বোচ্চ ৫০% শুল্কের আওতায় রয়েছে, তাই সেগুলো এই ছাড়ের বাইরে থাকবে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের গড় শুল্ক প্রায় ৭.৫%। অথচ মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অফিস জানাচ্ছে, ভারতের শুল্ক হার অনেক বেশি—যেমন অটো পণ্যে সর্বোচ্চ ১০০% এবং মার্কিন কৃষিপণ্যে গড় ৩৯%।

ব্যর্থ আলোচনা

মঙ্গলবার মধ্যরাতের আগে শেষ মুহূর্তে কোনো সমাধানের আশা দেখাতে পারেনি মার্কিন কর্মকর্তারা। হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো সাংবাদিকদের বলেন, “হ্যাঁ, ভারতের মার্কিনমুখী রপ্তানিতে ঘোষিত নতুন শুল্ক বুধবার থেকেই কার্যকর হচ্ছে।”

এর আগে পাঁচ দফা আলোচনায় ব্যর্থ হয় দুই দেশ। ভারত আশাবাদী ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো শুল্ক ১৫% পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখবে, যেমনটা জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো অংশীদার দেশগুলো পেয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ভুল হিসাব ও সংকেত হারানোর কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে আলোচনা ভেস্তে যায়। ২০২৪ সালে দুই দেশের পণ্য বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২৯ বিলিয়ন ডলার, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি ছিল ৪৫.৮ বিলিয়ন ডলার (মার্কিন সেন্সাস ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী)।

রপ্তানিকারক সংগঠনগুলোর ধারণা, নতুন শুল্ক ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির প্রায় ৫৫% অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এতে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো লাভবান হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এমন শুল্কভার ভারতের জন্য চীনের বিকল্প উৎপাদনকেন্দ্র হওয়ার সম্ভাবনাকেও ক্ষুণ্ন করতে পারে।

নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত এই বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের মধ্যেও নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই দেশের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা সোমবার ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। একইসঙ্গে তারা কোয়াড জোট (যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান) নিয়ে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর