৩৭ জন সাবেক ও বর্তমান নিরাপত্তা কর্মকর্তার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, আইনজীবী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হাতিয়ার হিসেবে এই কৌশল ব্যবহার করেছেন বা চেষ্টা করেছেন। এবারও তিনি একই পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন।

PostImage

৩৭ জন সাবেক ও বর্তমান নিরাপত্তা কর্মকর্তার সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল


এই সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা—৩৭ জন বর্তমান ও সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) বাতিল করা হবে—আলাদা কোনো পদক্ষেপ নয়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, আইনজীবী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হাতিয়ার হিসেবে এই কৌশল ব্যবহার করেছেন বা চেষ্টা করেছেন। এবারও তিনি একই পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন।

লক্ষ্যবস্তু কারা?

সর্বশেষ এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দফতর ও সংস্থায় দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা, যাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা দলের সদস্যরাও। তাদের অনেকেই ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমালোচক এবং কেউ কেউ এমন সংবেদনশীল বিষয়ে কাজ করেছেন যা ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করেছিল—যেমন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সেই মূল্যায়ন, যেখানে বলা হয়েছিল ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিল।

সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স শুধু বর্তমান কর্মরত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং সাবেক কর্মকর্তাদের জন্যও প্রয়োজনীয়। কারণ, অনেক সময় তারা কনট্রাক্টর হিসেবে সংবেদনশীল তথ্যে প্রবেশাধিকার পেতে এই ছাড়পত্র ব্যবহার করেন।

তবে এ সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রভাব কতটা হবে তা স্পষ্ট নয়, কারণ ৩৭ জনের মধ্যে কতজন এখনও সক্রিয় নিরাপত্তা ছাড়পত্র ধরে রেখেছেন, তা জানা যায়নি। সমালোচকরা বলছেন, এটি মূলত প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা, যার উদ্দেশ্য মতপ্রকাশকে দমন করা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ভয় দেখানো—যাতে তারা এমন কোনো মূল্যায়ন বা কাজ না করেন যা প্রেসিডেন্টকে বিরক্ত করতে পারে।

পূর্ববর্তী টার্গেট : হান্টার বাইডেন ল্যাপটপ চিঠির স্বাক্ষরকারীরা

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুরুর দিনেই তিনি ৫০ জনেরও বেশি সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তার নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেন। কারণ, তারা ২০২০ সালে হান্টার বাইডেন ল্যাপটপ কাণ্ড নিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল বিষয়টি “রাশিয়ার তথ্যযুদ্ধ” এর অংশ হতে পারে।

এই তালিকায় ছিলেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা—

  • জেমস ক্ল্যাপার (ওবামা আমলের ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স),

  • জন ব্রেনানলিওন প্যানেটা (ওবামার দুই সাবেক সিআইএ প্রধান),

  • এবং জন বোল্টন (ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, যাকে পরে ট্রাম্প বরখাস্ত করেছিলেন)।

হান্টার বাইডেন ল্যাপটপ বিতর্ক

২০২০ সালে নিউ ইয়র্ক পোস্ট দাবি করে, তারা হান্টার বাইডেনের একটি ল্যাপটপের হার্ড ড্রাইভ হাতে পেয়েছে, যা তিনি ডেলাওয়ারের উইলমিংটনের একটি রিপেয়ার শপে রেখে গিয়েছিলেন। সেখানকার তথ্য প্রকাশ করে সংবাদপত্রটি, যাতে ইউক্রেনে হান্টার বাইডেনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের যোগাযোগ পাওয়া যায়।

এরপর ৫১ জন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এক চিঠিতে বলেন, এই ইমেইলগুলো আসল কিনা তারা জানেন না, তবে এর প্রকাশভঙ্গি “রাশিয়ার তথ্যযুদ্ধের সব চিহ্ন বহন করছে।”

কিন্তু ট্রাম্পের তৎকালীন জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক ও বর্তমান সিআইএ পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফ এই মূল্যায়নের বিরোধিতা করে বলেন—রাশিয়ার জড়িত থাকার কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই। এ অবস্থানকে সমর্থন করে এফবিআই কংগ্রেসকে জানায়, র‍্যাটক্লিফের বক্তব্যের সঙ্গে যোগ করার মতো নতুন কিছু তাদের নেই।

পরবর্তীতে হান্টার বাইডেন কর ও অস্ত্র মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তবে পরে তার বাবা, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, তাকে ক্ষমা করে দেন।