গাজার বাসিন্দাদের ভিসা বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন

মানবিক ভিসার ওপর সন্ত্রাসের অভিযোগ রুবিওর কড়া অবস্থান: গাজার শিশুদের ভিসা বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন

PostImage

গাজার বাসিন্দাদের ভিসা বন্ধ করল ট্রাম্প প্রশাসন


রক্ষণশীল কর্মী লরা লুমার সামাজিক মাধ্যমে গাজা থেকে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আসা শিশুদের ভিডিও প্রকাশ করে তাদের কীভাবে ভিসা দেওয়া হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার একদিন পর, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ঘোষণা করেছে—গাজার মানুষের জন্য সব ভিজিটর ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হবে।

শনিবার এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র দফতর জানায়, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যে “স্বল্পসংখ্যক অস্থায়ী চিকিৎসা–মানবিক ভিসা” ইস্যু করা হয়েছিল, তার প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রবিবার সিবিএসের “ফেস দ্য নেশন” অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, একাধিক কংগ্রেস সদস্য এই ইস্যুতে প্রশ্ন তোলার পরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রুবিও জানান, আসলে খুব অল্পসংখ্যক শিশু এই ভিসা পেয়েছিল, যাদের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্করাও ছিলেন। তিনি দাবি করেন, কংগ্রেস সদস্যদের অফিস থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে—“যেসব সংগঠন এই ভিসা পেতে সহায়তা করেছে তারা হামাসের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত।” তবে তিনি কোনো প্রমাণ বা সংগঠনের নাম প্রকাশ করেননি।

রুবিওর ভাষায়:
“আমরা এই প্রোগ্রাম সাময়িকভাবে স্থগিত করছি। নতুন করে মূল্যায়ন করা হবে কীভাবে এসব ভিসা যাচাই হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর ভূমিকা আসলে কী।”

লুমারের অভিযোগ ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

লরা লুমার গত শুক্রবার এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ভিডিও পোস্ট করে জানান, গাজার শিশুরা এই মাসের শুরুর দিকে সান ফ্রান্সিসকো ও হিউস্টনে চিকিৎসার জন্য এসেছে, একটি সংগঠন HEAL Palestine-এর সহায়তায়। তিনি একে “জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি” আখ্যা দিয়ে ভিসা অনুমোদনকারী কর্মকর্তাকে বরখাস্তের দাবি জানান।

তিনি এ অভিযোগে ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ও মার্কো রুবিওকে ট্যাগ করেন। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন লুমারের প্রভাব তার প্রশাসনের ওপর নেই, অতীতে লুমারের সমালোচনার পরপরই বেশ কিছু কর্মকর্তা পদত্যাগ বা অপসারিত হয়েছেন।

পররাষ্ট্র দফতর রবিবার জানিয়েছে, কতগুলো ভিসা দেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে মন্তব্য করবে না। একই সঙ্গে তারা নিশ্চিত করেনি লুমারের পোস্টের কারণে ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কিনা।

HEAL Palestine-এর প্রতিক্রিয়া

আমেরিকাভিত্তিক মানবিক সংস্থা HEAL Palestine এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এই সিদ্ধান্তে “বেদনা ও হতাশা” প্রকাশ করছে। সংগঠনটি জানায়, তারা “গাজা থেকে গুরুতর আহত শিশুদের চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসে, যারা দেশে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ পায় না।” চিকিৎসা শেষে শিশুরা এবং তাদের সঙ্গে আসা পরিবারগুলো মধ্যপ্রাচ্যে ফিরে যায়।

ফেসবুকে সংগঠনটির এক পোস্টে দেখা গেছে, গাজা থেকে মিসর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন এক কিশোর, যিনি “গত দুই সপ্তাহে আনা ১৫তম শিশু”

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে:
“এটি কোনো শরণার্থী পুনর্বাসন প্রোগ্রাম নয়, এটি কেবল একটি চিকিৎসা প্রোগ্রাম।”

ডব্লিউএইচও’র আহ্বান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বারবার গাজা থেকে আরও চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস আধানম গেব্রেইসাস বুধবার বলেছেন:
“১৪ হাজার ৮০০-র বেশি রোগী এখনো এমন চিকিৎসার প্রয়োজন, যা গাজায় সম্ভব নয়।”

ডব্লিউএইচও-র তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ রোগী গাজা থেকে বাইরে চিকিৎসার জন্য যেত। সংস্থাটি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি রোগী বের হতে অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো বলেছে, ইসরায়েল কয়েক মাস ধরে গাজায় সাহায্য বন্ধ রাখায় ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সরবরাহও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে।

টেড্রস বুধবার আরও লিখেছেন:
“যুদ্ধবিরতি! শান্তিই সর্বোত্তম ওষুধ।”