দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ে ইউরোপ —ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসন

“আমি আশা করি সবাই এখন বুঝতে পারছেন এটি একটি হাইব্রিড যুদ্ধ। একদিন এটি পোল্যান্ড, আরেকদিন এটি ডেনমার্ক, আর আগামী সপ্তাহে সম্ভবত আমরা অন্য কোথাও নাশকতা বা ড্রোন দেখতে পাব,” বুধবার সাংবাদিকদের বলেন প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসন।

PostImage

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ে ইউরোপ —ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসন


কোপেনহেগেন, ২ অক্টোবর ২০২৫ — ইউরোপে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও ধারাবাহিক ড্রোন হামলার ঘটনাকে “হাইব্রিড যুদ্ধ” আখ্যা দিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসন। তিনি বলেছেন, ইউরোপ এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি এবং রাশিয়ার এই নতুন ধরণের যুদ্ধের মোকাবিলায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে এখনই সশস্ত্র ও প্রস্তুত হতে হবে।

গত এক সপ্তাহে ডেনমার্কের একাধিক বিমানবন্দর ও সামরিক ঘাঁটির কাছে অজ্ঞাত ড্রোন দেখা যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার কোপেনহেগেনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে যৌথ প্রতিরক্ষা জোরদার এবং রাশিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে একক কৌশল গড়ে তোলার বিষয়টি প্রধান আলোচ্য ছিল।

“আমি আশা করি সবাই এখন বুঝতে পারছেন এটি একটি হাইব্রিড যুদ্ধ। একদিন এটি পোল্যান্ড, আরেকদিন এটি ডেনমার্ক, আর আগামী সপ্তাহে সম্ভবত আমরা অন্য কোথাও নাশকতা বা ড্রোন দেখতে পাব,” বুধবার সাংবাদিকদের বলেন প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসন।

তিনি বলেন, রাশিয়া ইউরোপের স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে এবং এর মোকাবিলায় কেবল প্রতিরক্ষা নয়, প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। “আমাদের পুনরায় সশস্ত্র হতে হবে, আরও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে এবং ড্রোনসহ নতুন উদ্ভাবনে এগিয়ে যেতে হবে,” তিনি জোর দিয়ে বলেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ পরিস্থিতিকে “অত্যন্ত সংঘর্ষপূর্ণ” বলে উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের শক্তিশালী হতে হবে যেন আগ্রাসন প্রতিহত করতে পারি, তবে সতর্ক থাকতে হবে এবং কোনো প্রকার উত্তেজনা এড়াতে হবে।”

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি একই আহ্বান জানিয়ে বলেন, “উসকানির জবাব না দিয়ে শান্তভাবে চিন্তা করতে হবে। তবে নিজেদের প্রস্তুত করাটা অবশ্যই জরুরি।”

“হাইব্রিড যুদ্ধ” বলতে বোঝায় প্রচলিত সামরিক শক্তি (যেমন ট্যাঙ্ক ও ক্ষেপণাস্ত্র) এবং অপ্রচলিত কৌশল (যেমন সাইবার হামলা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা) — উভয়ের সমন্বয়।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, রাশিয়া দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনে সাইবার আক্রমণ, ইউক্রেনে যুদ্ধ, পারমাণবিক হুমকি এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। গত সপ্তাহে কোপেনহেগেন বিমানবন্দরে ড্রোন দেখা যাওয়ার পর তা বন্ধ করে দিতে হয়, এবং সেখানে ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ রাডার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।

ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং যুক্তরাজ্য বৈঠকের আগে ডেনমার্কে বিমান, যুদ্ধজাহাজ ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাঠিয়েছে। ফ্রেডেরিকসন বলেন, “আমাদের হুমকি দিতে ইচ্ছুক একমাত্র দেশ রাশিয়া। তাই আমাদের শক্তিশালী জবাব দিতে হবে।”

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউরোপে একাধিক গুরুতর আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। পোল্যান্ড ও রোমানিয়া রাশিয়াকে তাদের আকাশসীমায় ড্রোন পাঠানোর অভিযোগ করেছে।

পোল্যান্ড জানিয়েছে, তারা রুশ ড্রোন গুলি করে নামিয়েছে। রোমানিয়াও জানায়, ইউক্রেনে রুশ হামলার সময় একটি ড্রোন তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করে।

ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেন, নতুন উসকানির ক্ষেত্রে ন্যাটোর প্রতিক্রিয়া “আরও শক্তিশালী” হতে হবে। এমনকি তিনি রুশ যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। “কৌশলগত অস্পষ্টতার নীতির অধীনে আমি বলতে পারি, কিছুই বাদ দেওয়া হয়নি,” তিনি বলেন।

ম্যাক্রোঁ অভিযোগ করেন, ডেনমার্ক উপকূলে দেখা দেওয়া একটি রুশ তেলবাহী ট্যাঙ্কার “গুরুতর অপরাধ” করেছে এবং এটি রাশিয়ার “শ্যাডো ফ্লিট”-এর অংশ, যা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চলছে। ওই ট্যাঙ্কারটি ড্রোন উড্ডয়নের সঙ্গেও যুক্ত থাকতে পারে।

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ধারণা, দেশটি আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ইউরোপের অন্য কোথাও আক্রমণ চালাতে পারে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ন্যাটোকে পরীক্ষা করতে চান, বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ন্যাটো নিয়ে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে।

তবে অনেক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক রাশিয়ার সামরিক প্রস্তুতি ও আরেকটি বৃহৎ যুদ্ধ চালানোর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

 ইউরোপ জুড়ে ক্রমবর্ধমান ড্রোন হামলা, আকাশসীমা লঙ্ঘন ও সাইবার হুমকি ইঙ্গিত করছে যে রাশিয়া এক নতুন ধরণের “হাইব্রিড যুদ্ধ” শুরু করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে এখন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন ডেনমার্ক ও ফ্রান্সসহ ইইউ নেতারা।