আজ কর ছাড়, আগামীকাল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি — ট্রাম্প আবারও প্রমাণ করলেন
ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলো জরুরি অধিবেশন ডেকে খাদ্য সহায়তা ও স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দিচ্ছে। অন্যদিকে রিপাবলিকান রাজ্যগুলো শান্ত থেকে অপেক্ষা করছে, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তা দেখার জন্য।
আজ কর ছাড়, আগামীকাল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি — ট্রাম্প আবারও প্রমাণ করলেন
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে শুরু করে আলবুকার্কি ও স্যাক্রামেন্টো পর্যন্ত—আমেরিকার অঙ্গরাজ্যগুলোতে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সবচেয়ে আলোচিত আইন, “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট”। ফেডারেল পর্যায়ে কর-ছাড় ও ব্যয় কমানোর এই আইনের বাস্তব প্রভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলো জরুরি অধিবেশন ডেকে খাদ্য সহায়তা ও স্বাস্থ্যসেবায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দিচ্ছে। অন্যদিকে রিপাবলিকান রাজ্যগুলো শান্ত থেকে অপেক্ষা করছে, পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তা দেখার জন্য।
নিউ মেক্সিকোর উদ্যোগ
নিউ মেক্সিকো বুধবার থেকে একটি বিশেষ আইনসভা অধিবেশন শুরু করেছে। গভর্নর মিশেল লুজান গ্রিশাম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিপর্যয়কর বিল থেকে সৃষ্ট ক্ষতি ঠেকাতে আমাদের proactive হতে হবে।”
অধিবেশনে খাদ্য সহায়তা, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা এবং অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (ওবামাকেয়ার) ভিত্তিক স্বাস্থ্যবীমায় ভর্তুকি বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৭৫,০০০ বাসিন্দা এই বীমার আওতায় আছেন, তবে ফেডারেল ভর্তুকি এ বছর শেষ হয়ে যেতে পারে।
ডেমোক্র্যাট সিনেট নেতা পিটার ওয়ার্থ বলেছেন, “আমরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের হাতে তেলের রাজস্ব থেকে বাড়তি আয় আছে, সেটাই এখন জনগণকে রক্ষা করতে ব্যবহার করতে হবে।”
নিউ মেক্সিকো আগামী বছরগুলোতে কর-কাটছাঁটে বার্ষিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার হারাতে পারে বলে আশঙ্কা।
ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যয় কর্মসূচি
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম সম্প্রতি ২৫৫ মিলিয়ন ডলারের ব্যয় কর্মসূচি অনুমোদন করেছেন। এর মধ্যে খাদ্য কুপন (SNAP) কর্মসূচিতে ৮৪ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
নতুন ফেডারেল নিয়মে যদি কোনো রাজ্যের খাদ্য সহায়তার ত্রুটির হার ৬% ছাড়ায়, ২০২৭ সাল থেকে তাদেরও খরচ ভাগাভাগি করতে হবে। এজন্য ক্যালিফোর্নিয়া আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অ্যাসেম্বলি স্পিকার রবার্ট রিভাস বলেছেন, “আমরা কৌশলগত ও যত্নশীলভাবে কাজ করছি যাতে নতুন নিয়মে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”
তবে রাজ্যের বাজেট বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—আগামী বছরগুলোতে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
কলোরাডো ও ওরেগনের শঙ্কা
কলোরাডো প্রথম ডেমোক্র্যাট-নেতৃত্বাধীন রাজ্য হিসেবে বিশেষ অধিবেশন ডাকে। তাদের বাজেটে ৭৮৩ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে জানায় প্রশাসন। আইনসভা কর্পোরেট সুবিধা কমিয়ে এবং রাজ্যের কর ক্রেডিট বিক্রি করে এর কিছুটা পূরণ করেছে।
ওরেগনও একই সমস্যায় পড়েছে। তারা ফেডারেল কর-কোড থেকে কিছু অংশ আলাদা করার চিন্তাভাবনা করছে। এর মাধ্যমে শত শত মিলিয়ন ডলার রাজস্ব ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব হতে পারে।
ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি রব নসে বলেছেন, “এটা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য এটা করতে হবে।”
রিপাবলিকান রাজ্যগুলোতে ভিন্ন চিত্র
অন্যদিকে, রিপাবলিকান-নেতৃত্বাধীন রাজ্যগুলো অনেকটাই নিশ্চুপ।
-
মন্টানা প্রতিবছর প্রায় ১১৪ মিলিয়ন ডলার হারাবে বলে ধারণা। কিন্তু রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা বলেছেন, ২০২৭ সালের নিয়মিত অধিবেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করাই যথেষ্ট।
-
আইওয়া ২০২৫ অর্থবছরে ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার হারাতে পারে। তবুও গভর্নর কিম রেনল্ডস মনে করেন, রাজ্য “ভালো অবস্থায়” আছে এবং সময়মতো মোকাবিলা করা যাবে।
-
নর্থ ডাকোটা-তেও ফেডারেল কর-কোডের সরাসরি প্রভাব পড়বে, কিন্তু সেখানে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
বিভাজনের প্রতিফলন
ট্রাম্পের “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট” রিপাবলিকানদের কাছে একটি ঐতিহাসিক জয়। কিন্তু বাস্তবে এর প্রভাব রাজ্যভেদে ভিন্ন।
ডেমোক্র্যাট রাজ্যগুলো জনকল্যাণে আগেভাগে ব্যয় বাড়াচ্ছে, আর রিপাবলিকান রাজ্যগুলো ঝুঁকিকে কম গুরুত্ব দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করছে।
অবশেষে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই আইনের আসল প্রভাব কী? রিপাবলিকানরা কি সত্যিই আর্থিক ঝুঁকি এড়িয়ে যাচ্ছে, নাকি ডেমোক্র্যাটরা রাজনৈতিক কারণে আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলছে?