এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক, তুরস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত ট্রাম্পের – রাশিয়ান তেলের ওপর চাপ অব্যাহত

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তুরস্ককে এফ-৩৫ বিক্রির ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। “আমি মনে করি, সে যা কিনতে চায় তা কিনতে সক্ষম হবে,” বলেন ট্রাম্প। তিনি আরও জানান, তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা “খুব শিগগিরই” তুলে নেওয়া হতে পারে—“যদি বৈঠকটা ভালো হয়, তাহলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।”

PostImage

এরদোয়ানের সঙ্গে বৈঠক, তুরস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত ট্রাম্পের – রাশিয়ান তেলের ওপর চাপ অব্যাহত


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে আলোচনার সূচনায় ইঙ্গিত দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে এবং দেশটিকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে অনুমতি দিতে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, আঙ্কারাকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে হবে।

প্রায় ছয় বছর পর এরদোয়ানের হোয়াইট হাউস সফর শুরু হয় ট্রাম্পের উষ্ণ অভ্যর্থনার মাধ্যমে। ওভাল অফিসে পাশাপাশি বসা অবস্থায় ট্রাম্প এরদোয়ানকে “খুব শক্তিশালী মানুষ” বলে প্রশংসা করেন এবং বলেন তাঁরা “বন্ধু” রয়ে গেছেন—এমনকি বাইডেন প্রশাসনের সময়ও। আঙ্কারা এখন এই ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং বড় অস্ত্র ও বাণিজ্য চুক্তির বিনিময়ে সমঝোতা করতে আগ্রহী।

তবু, ট্রাম্প রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতে এরদোয়ানের ওপর চাপ দেন। তিনি বলেন, “রাশিয়া যখন ইউক্রেনে এভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে, তখন আমি চাই এরদোয়ান কোনোভাবেই রাশিয়া থেকে তেল না কিনুক।” ইউরোপে রাশিয়ান তেলের প্রধান ক্রেতা দেশগুলো হলো তুরস্ক, হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, তুরস্ককে এফ-৩৫ বিক্রির ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। “আমি মনে করি, সে যা কিনতে চায় তা কিনতে সক্ষম হবে,” বলেন ট্রাম্প। তিনি আরও জানান, তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা “খুব শিগগিরই” তুলে নেওয়া হতে পারে—“যদি বৈঠকটা ভালো হয়, তাহলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।”

ট্রাম্পের আমলে তুরস্কের নতুন আশা
বাইডেন প্রশাসন ন্যাটো মিত্র তুরস্কের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেছিল, বিশেষ করে আঙ্কারার মস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে। কিন্তু ট্রাম্পের আমলে, যিনি রাশিয়ার ব্যাপারে তুলনামূলক নরম অবস্থান নেন এবং এরদোয়ানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখেন, তুরস্ক সম্পর্ক উন্নতির আশায় আছে।

প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ও এরদোয়ানের সম্পর্ক নানা টানাপোড়েনে ছিল। তবে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর উভয়ের স্বার্থ সিরিয়া ইস্যুতে এক হয়েছে—যেখানে আগে তুর্কি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি টানাপোড়েনের মুখে পড়েছিল। এখন উভয়েই সিরিয়ার কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে।
তবে তারা গাজায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থানে আছে। আঙ্কারা যেটিকে গণহত্যা বলছে, সেটি দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যতে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা ও এফ-৩৫ ইস্যু
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেই ২০২০ সালে তুরস্কের রাশিয়ান এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। এর ফলে তুরস্ক এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়েছিল। তবে ট্রাম্পের সুর পাল্টানোর ফলে আঙ্কারা আবার এফ-৩৫ ক্রয়ের পথ খোলা আশা করছে।
তুরস্ক ইতোমধ্যে ৪০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কেনার আলোচনা করছে। প্রতিরক্ষা শিল্প খাত এবং আঞ্চলিক যুদ্ধ, জ্বালানি ও বাণিজ্য এই বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়।

ন্যাটো’র দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী হিসেবে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগরে ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবিলায় বিমান শক্তি বাড়াতে চায়।

এরদোয়ান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ১৯৭১ সালে বন্ধ হওয়া এবং এখনো গ্রিস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিরোধের কারণ হয়ে থাকা একটি অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ব স্কুল পুনরায় চালুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

বিশ্বের অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের আধ্যাত্মিক নেতা, ইস্তাম্বুলভিত্তিক ইকুমেনিক্যাল প্যাট্রিয়ার্ক বার্থোলোমিও এই মাসে ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং বলেছেন তিনি আশা করছেন আগামী বছর হেয়বেলিয়াদা দ্বীপের সেই ধর্মতত্ত্ব স্কুলটি ছাত্র ভর্তি শুরু করতে পারবে।

তুরস্ক, যা প্রধানত মুসলিম দেশ, এতদিন ইইউ’র চাপ সত্ত্বেও স্কুলটি খোলেনি। এরদোয়ান জানান, দেশে ফিরে তিনি বার্থোলোমিওর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।

সংবাদদাতা: জেফ ম্যাসন, তুভান গুমরুকচু (আঙ্কারা), জনাথন স্পাইসার ও ড্যারেন বাটলার (ইস্তাম্বুল), মাইক স্টোন (ওয়াশিংটন)
লেখা: স্টিভ হল্যান্ড
সম্পাদনা: হুমেইরা পামুক ও দীপা বাবিংটন