জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের সমাবেশ: গাজা যুদ্ধ ও বৈশ্বিক সংকট আলোচনার কেন্দ্রে
“গাজা, ইউক্রেন, সুদানসহ বহু স্থানে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করা হচ্ছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বাড়ছে। পৃথিবী জ্বলছে আগুন, বন্যা ও রেকর্ড তাপপ্রবাহে।”
জাতিসংঘে বিশ্বনেতাদের সমাবেশ: গাজা যুদ্ধ ও বৈশ্বিক সংকট আলোচনার কেন্দ্রে
নিউইয়র্কে শুরু হয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এবারও অংশ নিচ্ছেন এই বৈশ্বিক সমাবেশে। এবারের মূল প্রতিপাদ্য “একসাথে ভালো” (Better Together) হলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চলমান যুদ্ধ, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও ফিলিস্তিন সংকট।
প্রথম দিন ও আলোচনার সূচনা
সপ্তাহব্যাপী বৈঠকের সূচনা হয়েছে সোমবার, যেখানে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে সাধারণ বিতর্ক, যেখানে বিশ্বের নেতারা নিজেদের দেশ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখছেন।
কারা বক্তব্য রাখছেন
প্রথা অনুযায়ী প্রথম বক্তৃতা দিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। এরপর বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা-র।
মহাসচিবের সতর্কবার্তা
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন,
“গাজা, ইউক্রেন, সুদানসহ বহু স্থানে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করা হচ্ছে। দারিদ্র্য ও ক্ষুধা বাড়ছে। পৃথিবী জ্বলছে আগুন, বন্যা ও রেকর্ড তাপপ্রবাহে।”
তিনি আরও বলেন, গত ৮০ বছরে জাতিসংঘ নিখুঁতভাবে কাজ না করলেও সব সময় শান্তি ও উন্নতির চেষ্টা চালিয়ে গেছে।
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে নতুন সমীকরণ
বৈঠকের বড় আলোচ্য হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের পর ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও মোনাকোও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি ঘোষণা করেছে। এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এ সম্মেলনে অংশ নেয়নি। তাদের মতে, এভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিলে তা হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল হবে এবং যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির আলোচনা জটিল হয়ে উঠবে।
ট্রাম্পের বক্তৃতা নিয়ে নজর
মঙ্গলবার অনেকের দৃষ্টি থাকবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প-এর বক্তৃতার দিকে। তিনি পাঁচ বছর পর আবার জাতিসংঘে ভাষণ দেবেন। করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের অধিবেশন ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তার “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতি সবসময়ই জাতিসংঘের যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। তার প্রশাসন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবদান কমিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরে এসেছে।
দীর্ঘ বক্তব্যের তালিকা
এবারের সাধারণ বিতর্কে মোট ৮৯ জন রাষ্ট্রপ্রধান, ৪৩ জন সরকারপ্রধান, ১০ জন সহ-রাষ্ট্রপতি বা উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ৪৫ জন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপর্যায়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেবেন।
উপসংহার
জাতিসংঘের এই বৈশ্বিক মঞ্চে নেতারা শান্তি, উন্নয়ন ও সহযোগিতার আহ্বান জানালেও বাস্তবতা হচ্ছে যুদ্ধ, দারিদ্র্য ও জলবায়ু পরিবর্তনে পৃথিবী ক্রমশ জর্জরিত হয়ে উঠছে। তাই এবারও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—বিশ্বনেতারা কি সত্যিই একসাথে হয়ে পৃথিবীকে ভালো করতে পারবেন?