উইন্ডসরের রাস্তায় ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদ, লন্ডনের রাজকীয় স্বাগতম

মেয়র সাদিক খান অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে বিভাজনমূলক, কট্টর-ডানপন্থী রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকা সবচেয়ে বড়। তিনি বলেন, মার্কিন শহরে সেনা মোতায়েন ও সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা একেবারেই স্বৈরশাসকের কৌশল। খান আরও লেখেন, বাস্তবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি হলেও ব্রিটেনের উচিত সত্যি কথা বলা এবং প্রয়োজন হলে কড়া সমালোচনা করা।

PostImage

উইন্ডসরের রাস্তায় ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদ, লন্ডনের রাজকীয় স্বাগতম


মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এয়ার ফোর্স ওয়ান বিমানে লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। আগামী দুই দিনে তাঁকে রাজা চার্লস আতিথ্য দেবেন। সফরের কর্মসূচিতে রয়েছে সামরিক কুচকাওয়াজ এবং ব্রিটিশ ও মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের রেড অ্যারোজের সম্ভাব্য আকাশ প্রদর্শনী।

এই সফরকে ঘিরে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে ট্রাম্পের নীতি ও বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। মঙ্গলবার উইন্ডসরে স্টপ ট্রাম্প কোয়ালিশন নামে একটি সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা বুধবার লন্ডনের কেন্দ্রস্থলেও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।

গার্ডিয়ানে লেখা এক প্রবন্ধে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান অভিযোগ করেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে বিভাজনমূলক, কট্টর-ডানপন্থী রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকা সবচেয়ে বড়। তিনি বলেন, মার্কিন শহরে সেনা মোতায়েন ও সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা একেবারেই স্বৈরশাসকের কৌশল। খান আরও লেখেন, বাস্তবিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি হলেও ব্রিটেনের উচিত সত্যি কথা বলা এবং প্রয়োজন হলে কড়া সমালোচনা করা।

ট্রাম্প ও মেলানিয়াকে এয়ার ফোর্স ওয়ানের সিঁড়ির নিচে অভ্যর্থনা জানান মার্কিন প্রোটোকল প্রধান মনিকা ক্রাউলি। রাজা চার্লসের পক্ষ থেকে অভ্যর্থনা জানান হেনরি হুড, লর্ড-ইন-ওয়েটিং। উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার। এরপর ট্রাম্প দম্পতি মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টারে চড়ে রিজেন্টস পার্কে অবস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবন উইনফিল্ড হাউসে পৌঁছান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রায় ৭০ জন বিক্ষোভকারী উইন্ডসর ক্যাসেলের বাইরে ট্রাম্পবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেন। তারা ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে “ট্রাম্প আউট” এবং “ডোনাল্ড ট্রাম্প নট ওয়েলকাম হিয়ার” স্লোগান দেন। এক পর্যায়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ, কারণ তারা ট্রাম্প ও দণ্ডিত যৌন অপরাধী জেফ্রি এপস্টাইনের ছবি উইন্ডসর ক্যাসেলে প্রক্ষেপণ করেছিলেন।

বিক্ষোভকারী লিসা বেভান বলেন, “শনিবারের বর্ণবাদী মিছিলের পর আমাদের রাস্তায় নামতেই হবে। আমাদের বলতে হবে যে আমরা এসব সমর্থন করি না।”

জিওফ হল্যান্ড নামের এক ব্যক্তি সাউদ্যাম্পটন থেকে এসে বলেন, “সরকারের উচিত তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। ওর জন্য লালগালিচা বিছানো ঘৃণ্য ব্যাপার।”

স্টপ ট্রাম্প কোয়ালিশনের মুখপাত্র জেক অ্যাটকিনসন বলেন, “ট্রাম্পের রাজনীতি হলো ফ্যাসিবাদ আর কর্তৃত্ববাদ। আমরা কেবল এর বিরোধিতাই করছি না, আমরা সরকারকেও বার্তা দিচ্ছি যে ব্রিটিশ জনগণ এটা চায় না।”

অন্যদিকে, কিছু মানুষ ট্রাম্পকে সমর্থন জানাতে এসেছিলেন। অ্যান ডেলি (৬৫) কার্ডিফ থেকে একটি ট্রাম্প কাটআউট ও “মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” টুপি পরে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “আমাদের তাঁকে মিত্র হিসেবে দরকার। আশা করি রাজা ও ট্রাম্প একসঙ্গে বসে ফিলিস্তিন ও ইউক্রেনে বোমাবর্ষণ বন্ধের ব্যাপারে কথা বলবেন। শিশুরা মারা যাচ্ছে—এর মানে কী?”

স্থানীয় বাসিন্দা ডেভিড সাইট্রিন (৭৩) বলেন, তিনি নিজে বিক্ষোভে অংশ নেননি তবে প্রতিবাদকারীদের অবস্থান অনেকটা ব্রিটিশ জনগণের মতই। “আমি বলব না যে উনি আমার প্রিয় মানুষ। তবে রাষ্ট্রীয় সফরটা আসলে ওকে খুশি রাখার জন্য। আমি চাইলে হয়তো না আসাটাই ভালো হতো।”

রাজকীয় আড়ম্বর

রাজা চার্লস ও রানি ক্যামিলা বুধবার উইন্ডসর ক্যাসেলে ট্রাম্প দম্পতিকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন। সেই সময় উইন্ডসর ও লন্ডন টাওয়ার থেকে একসঙ্গে গোলন্দাজদের গুলিবর্ষণ হবে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সফরে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গার্ড অব অনার দেওয়া হবে ট্রাম্পকে। প্রায় ১,৩০০ সেনা ও ১২০ ঘোড়া অংশ নেবে। রয়্যাল মেরিনস, রয়্যাল নেভি, ব্রিটিশ আর্মি ও রয়্যাল এয়ার ফোর্সের সদস্যরা থাকবেন এতে।

ট্রাম্প এরপর রাজা চার্লসের সঙ্গে ক্যারেজ শোভাযাত্রায় যোগ দেবেন। সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয় সফরে বিশেষ সামরিক অনুষ্ঠান বিটিং রিট্রিট অনুষ্ঠিত হবে। এরপর আয়োজিত হবে এক জাঁকজমকপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ভোজসভা, যেখানে সংগীত পরিবেশন করবে ডাচেস অব এডিনবরার স্ট্রিং অর্কেস্ট্রা, হাউসহোল্ড ক্যাভালরির ট্রাম্পেটার এবং স্কটস গার্ডসের পাইপাররা।

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প যাবেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কান্ট্রি রেসিডেন্স চেকার্সে। তার আগমনে আরএএফ হালটনের বিমানবাহিনীর সদস্যরা সারিবদ্ধ হয়ে সম্মান জানাবেন।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর