ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডে রুশ ড্রোন ভূপাতিত, ‘আগ্রাসন’ বলছে ওয়ারশ

পোল্যান্ডের সামরিক কমান্ড জানিয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের সময় ড্রোনগুলো বারবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। রাডার ১০টির বেশি বস্তু শনাক্ত করেছে এবং যেগুলো হুমকি তৈরি করতে পারে সেগুলো “নিষ্ক্রিয়” করা হয়েছে।

PostImage

ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডে রুশ ড্রোন ভূপাতিত, ‘আগ্রাসন’ বলছে ওয়ারশ


ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ড বুধবার তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করা রাশিয়ার ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে রুশ বাহিনীর ব্যাপক হামলার সময় এই ঘটনা ঘটে। পোল্যান্ড এটিকে “একটি আগ্রাসনের কাজ” বলে উল্লেখ করেছে। এটাই প্রথমবার যখন ন্যাটোর কোনো সদস্য রাষ্ট্র সরাসরি গুলি চালিয়ে রুশ ড্রোন নামালো।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক জানিয়েছেন, বৃহৎ সংখ্যক রুশ ড্রোন পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, যার মধ্যে সরাসরি হুমকি তৈরি করা ড্রোনগুলো ভূপাতিত করা হয়েছে। ন্যাটো মুখপাত্র জানান, ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে পোল্যান্ডের নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং জোট ঘনিষ্ঠভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।

পোল্যান্ডের সামরিক কমান্ড জানিয়েছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের সময় ড্রোনগুলো বারবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। রাডার ১০টির বেশি বস্তু শনাক্ত করেছে এবং যেগুলো হুমকি তৈরি করতে পারে সেগুলো “নিষ্ক্রিয়” করা হয়েছে।

তারা জানায়, “ড্রোনগুলোর সম্ভাব্য ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করার কাজ চলছে।” কমান্ড ন্যাটো এয়ার কমান্ড এবং ডাচ বিমানবাহিনীর এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছে।

জনগণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হয় এবং পদলাস্কি, মাজোভিয়েস্কি ও লুবলিন অঞ্চলে ঝুঁকির মাত্রা বেশি বলে উল্লেখ করা হয়। কমান্ডের ভাষ্য: “এটি এক ধরনের আগ্রাসন, যা আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য বাস্তব হুমকি তৈরি করেছে।”

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বিষয়টি সম্পর্কে ব্রিফিং পেয়েছেন বলে সিএনএনের সাংবাদিক কাইটলান কলিন্স জানিয়েছেন। তবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ন্যাটোও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।

২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রুশ ড্রোন একাধিকবার ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোর আকাশসীমায় ঢুকেছে, যার মধ্যে পোল্যান্ড ও রোমানিয়া রয়েছে। তবে এতদিন এসব ড্রোন ভূপাতিত করা থেকে বিরত থেকেছে ন্যাটো সদস্যরা, যাতে উত্তেজনা না বাড়ে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানান, রাশিয়া এক রাতে ৪১৫টি ড্রোন ও ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে, যার মধ্যে অন্তত ৮টি “পোল্যান্ডের দিকে লক্ষ্য করা হয়েছিল”। তিনি বলেন, “এটি ইউরোপের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক নজির। একটি শক্ত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন—যা কেবল ইউক্রেন, পোল্যান্ড, ইউরোপীয় রাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ জবাব হতে পারে।”

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার বলেছেন, পশ্চিম ইউরোপের দাবি যে রাশিয়া একদিন ন্যাটো সদস্যদের আক্রমণ করতে পারে—তা হলো মিথ্যা প্রচার, যাতে রাশিয়াকে শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। মস্কো বলেছে, তাদের ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধানোর কোনো ইচ্ছা নেই।


বিমানবন্দর বন্ধ

পোল্যান্ডের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ওয়ারশর শোপেন বিমানবন্দর কয়েক ঘণ্টার জন্য আকাশসীমা বন্ধ রাখে। পরে আবার চালু হলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সারা দিনজুড়ে বিলম্ব ও ব্যাঘাত ঘটবে। পূর্বাঞ্চলীয় শহর লুবলিনের বিমানবন্দর বন্ধই রাখা হয়েছে।

ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী পশ্চিমাঞ্চল ভোলিন ও লভিভেও সারা রাত বিমান হামলার সতর্কতা জারি ছিল। ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানিয়েছিল, রুশ ড্রোন ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে প্রবেশ করে জামোস শহরকে হুমকি তৈরি করেছে। তবে পরে তারা টেলিগ্রামে দেওয়া ওই বার্তাটি মুছে ফেলে।


আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

মার্কিন সিনেটর ডিক ডারবিন বলেছেন, ন্যাটোর আকাশসীমায় বারবার রুশ ড্রোন প্রবেশ করা মানে হলো “পুতিন আমাদের অঙ্গীকার পরীক্ষা করছেন—আমরা কি পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারব কি না।”

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জো উইলসন বলেছেন, রাশিয়া ড্রোন দিয়ে পোল্যান্ডকে আক্রমণ করছে—এটি একপ্রকার “যুদ্ধ ঘোষণা”। তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আহ্বান জানিয়েছেন, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্র ধ্বংস করতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিতে।

উইলসন বলেন, “পুতিন আর শুধু ইউক্রেনে হেরে গিয়েই ক্ষান্ত নন, তিনি এখন সরাসরি ন্যাটোর ভূমিতেও আমাদের অঙ্গীকার পরীক্ষা করছেন।”

ট্রাম্প, যিনি গত আগস্টে পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্রে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, গত সপ্তাহে বলেছেন, তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ধাপে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটতে প্রস্তুত। জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই ছিল তার সবচেয়ে শক্ত ইঙ্গিত যে তিনি মস্কোর ওপর চাপ বাড়াতে পারেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নিষেধাজ্ঞা কর্মকর্তা সোমবার ওয়াশিংটনে ছিলেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এটি হবে জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর প্রথম ট্রান্সআটলান্টিক সমন্বিত পদক্ষেপ


অতিরিক্ত সতর্কতা

পোল্যান্ড ২০২২ সালে একটি ইউক্রেনীয় ক্ষেপণাস্ত্র তাদের সীমান্তবর্তী গ্রামে আঘাত হানার পর থেকেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ওই ঘটনায় দুইজন নিহত হয়েছিলেন।

এছাড়া বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে পোল্যান্ড তাদের বেলারুশ সীমান্ত বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। কারণ রাশিয়া-নেতৃত্বাধীন সামরিক মহড়া বেলারুশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

“জাপাদ” নামে পরিচিত এই যৌথ সামরিক মহড়া ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, তারা বেলারুশ ও রাশিয়ার সীমান্ত প্রতিরক্ষা জোরদার করবে।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর