ট্রাম্প–ইউরোপীয় নেতাদের আলোচনায় বিশ্ব শান্তির অগ্রগতি, কিন্তু গা'জা এখনো রক্তাক্ত!

হোয়াইট হাউসে ঐতিহাসিক বৈঠক : ট্রাম্প–ইউরোপীয় আলোচনায় বিশ্ব শান্তির পথে অভাবনীয় অগ্রগতি; তবে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬২,০০০ ফিলিস্তিনি, মুসলিম বিশ্বের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ।

PostImage

ট্রাম্প–ইউরোপীয় নেতাদের আলোচনায় বিশ্ব শান্তির অগ্রগতি, কিন্তু গা'জা এখনো রক্তাক্ত!


হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠককে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ইতিহাসে এক “ঐতিহাসিক মোড়” হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু ছিল রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান, বিশ্ব নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র একসাথে কাজ করছে যাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি বৈঠক দ্রুত আয়োজন করা যায়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো এবং একটি ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।”

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা আশা করছেন, শিগগিরই পুতিন–জেলেনস্কির মধ্যে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ শুরু হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে বলেন, “শান্তি প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এ যুদ্ধে আর কোনো শিশুর প্রাণ হারানো উচিত নয়।”

বিশ্লেষকদের মতে, এই বৈঠকের মাধ্যমে শুধু ইউক্রেন নয়, বৈশ্বিক পর্যায়ে শান্তি প্রক্রিয়ার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।


গাজায় ইসরায়েলি হামলা: ৬২,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত

অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে চলছে এক ভিন্ন বাস্তবতা। প্রায় দুই বছরের লাগাতার ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যেই গাজায় নিহত হয়েছে ৬২,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি। প্রতিদিনের বোমাবর্ষণ, অনাহার, খাদ্যের সন্ধানে বের হওয়া সাধারণ মানুষকে হত্যার ঘটনা গাজাকে আজ এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে।

সোমবার ভোর থেকে গাজা সিটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন অন্তত ৩০ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জন খাদ্য সহায়তার খোঁজে বের হয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে সাংবাদিক ইসলাম আল-কৌমিও রয়েছেন। যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও ভারী কামান হামলায় শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সতর্ক করেছে, গাজার পাঁচ বছরের নিচের প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু অনাহারেই মারা গেছেন ২৬৩ জন, এর মধ্যে ১১২ শিশু। মে মাস থেকে বিতরণকেন্দ্রে খাদ্য নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন প্রায় ২,০০০ মানুষ।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল সুপরিকল্পিতভাবে গাজায় অনাহার সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সংস্থা এমএসএফ (MSF) বলছে, খাদ্যের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলে মানুষ বিতরণকেন্দ্রে ছুটে যাচ্ছে, আর সেখানেই আহত ও নিহত হয়ে হাসপাতালে আসছে প্রতিদিন।


মুসলিম বিশ্বের নীরবতা

ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে আমেরিকা ও ইউরোপ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে শান্তির টেবিলে বসছে, তখন গাজায় শিশুদের বুক চিরে বোমা পড়ছে, ক্ষুধায় কাতর মানুষ মারা যাচ্ছে—তবুও মুসলিম বিশ্বের নেতারা কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছেন না।
অনেকেই বিবৃতি দিচ্ছেন, আবার কেউ ভেতরে বিভক্ত হয়ে নিষ্ক্রিয় রয়ে যাচ্ছেন।

গৃহহীন ফিলিস্তিনি নোমান হামাদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ইসরায়েলের কাছ থেকে কিছু চাই না। শুধু আমাদের ঘরে ফিরে যেতে দিন, এতটুকুই যথেষ্ট।” কিন্তু সেই ঘরে ফেরার পথ প্রতিদিন আরও দূরে সরে যাচ্ছে।


হোয়াইট হাউসের বৈঠক বিশ্ব শান্তির পথে আশার আলো জ্বালালেও গাজার রক্তাক্ত বাস্তবতা সেই আলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। ইউক্রেনের জন্য ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ সম্ভব হলেও, মুসলিম বিশ্বের ভেতরকার বিভাজন গাজার শিশুদের মৃত্যু আরও দ্রুত ডেকে আনছে।
গাজা আজ শুধু একটি ধ্বংসস্তূপ নয়, বরং মুসলিম বিশ্বের ব্যর্থতার প্রতীক।

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর