জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ভাষণ: মে মাসের যুদ্ধে ৭টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি

ভারত বিনা প্ররোচনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালায়, আর পাকিস্তান ভাগ্যের নির্দেশনা অনুযায়ী তার জবাব দিয়েছে। “শত্রু ঔদ্ধত্যের চাদরে ঢাকা অবস্থায় এসেছিল, আমরা তাদের অপমানিত করে ফিরিয়ে দিয়েছি, রক্তাক্ত নাক উপহার দিয়েছি,” বলেন শরিফ।

PostImage

জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের ভাষণ: মে মাসের যুদ্ধে ৭টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি


জাতিসংঘ সদর দপ্তর: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, চলতি বছরের মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে পাকিস্তান সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে এবং ৭টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। একই সঙ্গে তিনি গাজায় ফিলিস্তিনিদের উপর চলমান মানবিক বিপর্যয়, কাশ্মীর সংকট ও দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন।

শুক্রবার কোরআনের আয়াত পাঠের মধ্য দিয়ে ভাষণ শুরু করে শরিফ স্মরণ করিয়ে দেন যে তিনি গত বছর ইউএনজিএ-তে সতর্ক করেছিলেন পাকিস্তান যে কোনো “বাহ্যিক আগ্রাসনের” জবাব দেবে, এবং এ বছরের ঘটনাবলি সেই সতর্কবার্তাকে সত্য প্রমাণ করেছে।

তিনি অভিযোগ করেন, ভারত বিনা প্ররোচনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলা চালায়, আর পাকিস্তান ভাগ্যের নির্দেশনা অনুযায়ী তার জবাব দিয়েছে।

“শত্রু ঔদ্ধত্যের চাদরে ঢাকা অবস্থায় এসেছিল, আমরা তাদের অপমানিত করে ফিরিয়ে দিয়েছি, রক্তাক্ত নাক উপহার দিয়েছি,” বলেন শরিফ।

তিনি আরও দাবি করেন, ভারত পাহালগাম হামলার আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে এবং পাকিস্তানের শহর ও বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

শরিফ বলেন, পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘিত হলে সেনারা পেশাদার দক্ষতায় পাল্টা জবাব দেয়, শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে এবং সাতটি ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে “টুকরো টুকরো” করে ফেলে।

পাহালগাম হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন ভারতীয় পর্যটক। ভারত তৎক্ষণাৎ পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করে এবং আন্তর্জাতিক তদন্তে অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেয়, যা দিল্লি প্রত্যাখ্যান করে।

এরপর দুই দেশের মধ্যে চারদিনব্যাপী ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সংঘর্ষ চলে। অবশেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়। পাকিস্তান ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। তবে ভারত দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা ছিল না।

কাশ্মীর ও ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ

শরিফ ভাষণে বলেন, পাকিস্তান সবসময় কাশ্মীরিদের পাশে থাকবে।

“একদিন ভারতের কাশ্মীরে নির্যাতন থেমে যাবে এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীর তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ফিরে পাবে,” তিনি বলেন।

তিনি ইসরায়েলি দখল থেকে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার দাবি জানান এবং বলেন,

“গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ইতিহাসে বিরল এক নারকীয় ঘটনা।”

শরিফ বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ফিলিস্তিনি শিশু হিন্দ রজবকে, যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়।

“হিন্দ রজবের কণ্ঠস্বর আমরা সবাই শুনেছি—কিভাবে সে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য ফোনে সাহায্য চাচ্ছিল। সে যেন আমাদের সন্তান ছিল। সেই কষ্ট আমরা সহ্য করিনি। এই ব্যর্থতার দায় ইতিহাস ও পরকাল আমাদের ক্ষমা করবে না। সবচেয়ে ছোট কফিনই সবচেয়ে ভারী।”

তিনি এই ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় হামলায় নিহত এক পাকিস্তানি শিশুর তুলনা টেনে আনেন।

“আমিও জানি ছোট কফিন কত ভারী হয়—সম্প্রতি ভারতের হামলায় নিহত ৬ বছরের আব্বাসের কফিন আমি নিজ হাতে বহন করেছি। তাই গাজা কিংবা বিশ্বের যে কোনো শিশুর মৃত্যু আমরা আর উপেক্ষা করতে পারি না।”

শরিফ পুনরায় ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি জানান—১৯৬৭ সালের সীমারেখা অনুযায়ী এবং জেরুজালেম (আল কুদস শরিফ) রাজধানী হিসেবে।

তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যে আরব-ইসলামী দেশগুলোকে নিয়ে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে প্রশংসা করেন এবং বলেন,

“গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্পের এ শান্তি উদ্যোগের কৃতিত্ব তাকে দেওয়া উচিত।”

সিএসবি নিউজ-এর আরও খবর