আলাস্কা বৈঠকের প্রেক্ষাপট: ট্যারিফের চাপ থেকে বেরোতে ভারতের নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ
যদি রাশিয়া–ভারত–চীন জোট কার্যকরভাবে সক্রিয় হয়, তবে ভারত শুধু ট্যারিফ সমস্যার চাপ সামলাতে পারবে না, বরং এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণের সূচনা করবে। ফলে নয়াদিল্লি কেবল চাপের শিকার নয়, বরং সমাধান তৈরির শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবেই আবির্ভূত হতে পারে।
আলাস্কা বৈঠকের প্রেক্ষাপট: ট্যারিফের চাপ থেকে বেরোতে ভারতের নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আলাস্কা বৈঠককে ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়। এই বৈঠকের দিকে কেবল ওয়াশিংটন বা মস্কো নয়, নয়াদিল্লিও গভীর নজর রাখছে।
ট্রাম্প প্রশাসন হঠাৎ ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক বসানোর পর থেকে ভারত–আমেরিকা সম্পর্কে বড় ধাক্কা লেগেছে। বিশেষ করে ভারতের রুশ তেল কেনাকে শাস্তি দেওয়ার অজুহাতে এই চাপ বাড়ানো হয়েছে, অথচ চীন আরও বেশি রুশ তেল কিনলেও তাদের ওপর এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে নয়াদিল্লি এখন বিকল্প কূটনৈতিক পথ খুঁজছে।
নতুন কৌশল: রাশিয়া–ভারত–চীন (RIC) জোট
এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া আবার সামনে এনেছে একটি পুরনো ধারণা—রাশিয়া–ভারত–চীন (RIC) জোট। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের মস্কো সফর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের রাশিয়া যাত্রার প্রস্তুতি, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দিল্লি সফর—সব মিলিয়ে নয়াদিল্লি যেন সক্রিয়ভাবে এই সমীকরণে নতুন গতি আনছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যদিও ভারত–চীন সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত বিরোধ ও অবিশ্বাসের কারণে ভঙ্গুর, তবুও অর্থনীতি ও আঞ্চলিক ভারসাম্যের স্বার্থে সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। মস্কোর উদ্যোগে যদি এই ত্রিপাক্ষিক জোট পুনরুজ্জীবিত হয়, তবে তা ভারতের জন্য ট্যারিফের চাপ মোকাবিলায় এক ধরনের কৌশলগত ঢাল হিসেবে কাজ করতে পারে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই জোট?
-
রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সহযোগী।
-
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, যার সঙ্গে সীমিত হলেও বাণিজ্যিক সমন্বয় ভারতের উপকারে আসতে পারে।
-
ভারত নিজেকে “মাল্টি-অ্যালাইনমেন্ট” নীতির মাধ্যমে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পারে।
এভাবে RIC জোট ভারতের জন্য শুধু কূটনৈতিক বিকল্প নয়, বরং আমেরিকার একতরফা চাপের জবাবে একটি শক্তিশালী বার্তাও হতে পারে।
আশার আলো
ভারতের সামনে পথ সহজ নয়। ট্রাম্প প্রশাসন আরও শুল্ক বা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিতে পারে। তবে ইতিহাস বলে, ভারত কখনো একপাক্ষিকভাবে কোনো শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়নি। বরং একাধিক কূটনৈতিক কার্ড হাতে রেখে ভারসাম্য তৈরি করাই ছিল নয়াদিল্লির কৌশল।
যদি রাশিয়া–ভারত–চীন জোট কার্যকরভাবে সক্রিয় হয়, তবে ভারত শুধু ট্যারিফ সমস্যার চাপ সামলাতে পারবে না, বরং এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণের সূচনা করবে। ফলে নয়াদিল্লি কেবল চাপের শিকার নয়, বরং সমাধান তৈরির শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবেই আবির্ভূত হতে পারে।